ঢাকা | রবিবার | ২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৫শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

কমলনগরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি ঘর বিক্রির অনিয়মে উৎপাত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর এখন লাখ টাকায় বিক্রি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, যেন সরকারি এই ঘর বিক্রির এক মহোৎসব চলছে যেখানে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। দালালদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব ঘর অনেক সময় একাধিকবার বিক্রি হয়ে যায়, কেউ কেউ ভাড়ায় রাখছেন অন্য পরিবারের কাছে।

চরকাদিরা ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, এখানে কিছু ঘর একটি চিহ্নিত দালালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যিনি সেখানে প্রায় ১০টি ঘর তালাবদ্ধ রেখেছেন। প্রয়োজনীয় সময় ভেতর থেকে ঘরগুলো লাখ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এই দালাল নিজেই যেন ঘর নির্মাণকারীর মতো নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন।

জনসুত্রে জানা গেছে, ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রজেক্টের মোট ৮৯টি ঘরের মধ্যে প্রায় ৫০টির মতো ঘর বিক্রি হয়ে গেছে। এখন এমনিতেই অনেক বাড়িতে ঘর ক্রেতারা বসবাস করছেন, কেউ কেউ ভাড়ায় থাকছেন, তবে ১৫টির মতো ঘর এখনো তালাবদ্ধ। টাকার প্রয়োজনে এসব ঘর সরকারি শর্তভঙ্গ করে বিক্রির পণ্য হয়ে উঠছে। একই অবস্থা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট বাজার সংলগ্ন ভুলুয়া ব্রীজ আশ্রয়ণ প্রকল্পেও বিরাজ করছে।

উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চরকাদিরা, হাজিরহাট, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ, চরকালকিনি ও চরমার্টিন ইউনিয়নে পাঁচ ধাপে মোট ৮২০টি ঘর প্রকল্প হিসেবে নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে উক্ত ঘর বরাদ্দের জন্য আবেদন নেওয়া ও যাচাই-বাছাই করা হয়।

তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিজের জমি-বাড়ি থাকা সত্ত্বেও অনেকে ঘুষ দিয়ে ঘর পেয়ে বসবাস না করে বাসা লাখ টাকায় বিক্রি করছেন। অন্যদিকে প্রকৃত গৃহহীনরা আর্থিক কারণে ঘর পেতে পারেননি। ফলে গৃহহীনরা দালালদের কাছ থেকে ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় ঘর কিনছেন। কেউ কেউ মাসে ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা ভাড়া দিয়ে বসবাস করছেন।

চরকাদিরার ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি ঘর বিক্রি হয়েছে, এখনও ১০টির মত ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে, যা দালালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ব্যাংক বা প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকায়, ঘর বিক্রির এই অবৈধ মহোৎসব চলছেই।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পরিতোষ কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, ঘর নির্মাণের দায়িত্ব তাদের হলেও বরাদ্দ তালিকা ও যাচাই বাছাইসহ জড়িত থাকতে হয়েছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। তাই এ ব্যাপারে তারা বিস্তারিত বলতে পারবেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মুহাম্মদ আরাফাত হোসেন বলেছেন, সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কমলনগরের ইউএনও রাহাত উজ-জামান জানান, এমন অভিযোগগুলো নানা মাধ্যমে শুনেছেন এবং নিজে পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, প্রকৃত সচ্ছল ও গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দ হওয়া সরকারি ঘর অযথা অনিয়মে বিক্রি হওয়া বা ভাড়ায় দেওয়ার ঘটনা প্রতিরোধে তদারকি বাড়ানো হবে।