ঢাকা | সোমবার | ২৮শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

গাজায় ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ ও মানবিক সংকট বাড়ছে

মার্কিন শীর্ষ কূটনীতিকের ইউরোপ সফরের আগ মুহূর্তে শতাধিক আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা সতর্ক করেছিলেন গাজায় গুরুতর দুর্ভিক্ষের兆 লক্ষণ নিয়ে। এই সফরে যুদ্ধবিরতি এবং ত্রাণ কাঠামোর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

গত ২১ মাস ধরে চলা সংঘর্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমবর্ধমান। বর্তমানে গাজায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা মৌলিক খাদ্য ও জীবনযাত্রার অপরিহার্য সামগ্রীর কঠোর অভাবের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, জয়েন্ট গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে একটি নতুন সহায়তা উদ্যোগ ২০২৩ সালের মে মাসে শুরু হলেও, এর ফলে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এই ত্রাণ বিতরণকালে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

১১১টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের সহকর্মী ও সেবা পাথরগণ অসহায়ভাবে ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ছে।’’ তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, স্থল পথে ত্রাণ সরবরাহের অবাধিতা এবং জাতিসংঘের তত্বাবধানে মানবিক সহায়তা চালুর জন্য আবেদন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র গতকাল জানিয়েছে, তাদের কূটনীতিক স্টিভ উইটকফ এ সপ্তাহে ইউরোপ সফর করছেন, যেখানে গাজা ইস্যুতে আলোচনা হবে। এরপর তিনি মধ্যপ্রাচ্য সফরেও যেতে পারেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, উইটকফ ’জোরালো আশা নিয়ে যাচ্ছেন নতুন যুদ্ধবিরতি এবং মানুষকে সহায়তার জন্য করিডোর গঠন সম্ভব হবে।’

মে মাস শেষে ইসরায়েল কিছু অগ্রগতি করলেও, গাজার মানুষ এখনও খাবার ও মৌলিক চাহিদার ঘাটতির মধ্যে রয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, গাজার পরিস্থিতির তুলনা সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজার ভেতরে এবং বাইরে টনভর্তি ত্রাণ সামগ্রী গুদামে আটকে আছে, তবে সেসব সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।

গাজার কেন্দ্রীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুদের ভর্তি দেখছেন। এক মা তার মৃত ৩৫ দিনের শিশুকে দেখিয়ে কান্না জড়িয়ে বলেন, ‘আমি তোমাকে খাওয়াতে পারিনি, চোখের সামনে তোমাকে মরতে দেখেছি।’ এমন করুণ দৃশ্য গাজার হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত।

বিভিন্ন পরিবার শিশুদের ভালোভাবে খাওয়ানোর জন্য মার্কিন ও ইসরায়েলের তৈরি জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ বাড়িতে খাবার নেই। অনেকেই শুধু পানি খাইয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, কারণ রুটি-কেনার পওয়া নেই।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩০ জন নিহত ও ৪৯৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৫৪ জন ত্রাণপ্রত্যাশী ছিলেন। ২১ মাসের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৯ হাজার নিহত ও ১ লাখ ৪০ হাজার আহত হয়েছে।

এদিকে, আরও এক ইসরায়েলি সৈনিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, যা গত দুই সপ্তাহে চতুর্থ। বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৯ জন এবং গাজার যুদ্ধ শুরু থেকে ২১ মাসে ৪২ জন সৈনিক আত্মহত্যা করেছেন বলে জানানো হয়েছে।

গাজায় চলমান সংঘর্ষের বিরুদ্ধে পোপ লিও বর্বরতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলি হামলার পর এক প্রার্থনা সভায় তিনি এই বার্তা দিয়েছেন।

ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক গিডিয়ন লেভি সরকারকে গাজায় জাতিগত নির্মূলের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার একটি জনাকীর্ণ এলাকা থেকে স্থানান্তর নির্দেশ দেওয়া শুরু করেছে। একই সময়ে, যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ মানবাধিকার সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের ৫৫ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।

গাজার মানবিক সংকট ক্রমশ আশঙ্কাজনক আকার ধারণ করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবিলম্বে সক্রিয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন।