ঢাকা | সোমবার | ২১শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

জুলাই সনদকে সংবিধানের মূল নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা রিজভীর তীব্র সমালোচনা

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশের সংবিধানের মূল নীতির মাঝে ‘জুলাই সনদ’ অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বানকে ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘বিএনপি ইতোমধ্যে অনেক দিক থেকে জুলাই সনদকে মেনে নিয়েছে, কিন্তু কেন এটিকে সংবিধানের মৌলিক নীতির অংশ করা হবে তা বুঝতে পারছি না।’

আজ শুক্রবার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে এবং জিয়া পরিষদ আয়োজিত নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নামাজের জায়নামাজ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা সারা দেশে ও সব সময় অব্যাহত থাকবে। সংস্কার কোনো স্থির পর্বতমালা নয়, বরং এটি গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে বাধ্য।’ রিজভী যুক্তি তুলে ধরেন যে, ‘যখনই গণতন্ত্র বা জনগণের স্বার্থে প্রয়োজন হবে, তখন সংস্কার এবং উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা উচিত। এটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।’

তবে তিনি সংবিধানের মূল নীতিতে জুলাই সনদ অন্তর্ভুক্ত করার দাবি বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘এ ধরনের দাবি বিভ্রান্তিকর এবং এতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। কেন এমনভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে সেটা আমাদের জন্য প্রশ্ন।’ তিনি রাজনীতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান যাতে তারা বিভিন্ন দাবি উত্থাপনের পরিবর্তে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার ওপর বেশি মনোযোগ দেয়।

রিজভী বলেন, ‘স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্রের দরজা বন্ধ রেখেছেন এবং জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন। আমাদের কাজ এখন সেই দরজা আবার খুলে দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাহায্যে সরকার গঠন করে জনগণের প্রতি ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া।’

তিনি আরও বলেন, বিএনপি কখনই সংস্কারের বিরুদ্ধে নয় বরং সবসময় তা সমর্থন করে এসেছে। ‘আপনারা যে সংস্কারের কথাগুলো বলেন, সেগুলোর অনেকটাই বিএনপির ৩১-দফা সংস্কার রূপরেখায় অন্তর্ভুক্ত আছে।’

দেশের রাজনৈতিক সংকট এবং সরকারের অপব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রিজভী উল্লেখ করেন, ‘জনগণের সরকারকে সর্বক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, যা বর্তমানে নেই। আমরা আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার সকল রাজনৈতিক দলের ও জনগণের সমর্থন নিয়ে কাজ করবে, না যে শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের কিছু মিত্রের জন্যই সীমাবদ্ধ।’

তিনি অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হচ্ছে, যার ফলে কর্মহীনতার হার বাড়ছে। মানুষ যদি খাবার কিনতে না পারে তবে সেটি দুর্ভিক্ষের প্রথম লক্ষণ। যদি এ অবস্থার উন্নতি না হয়, তখন কেউ ছাড় পাবে না এবং ফ্যাসিস্টরা এর সুযোগ নিয়ে দেশকে further ক্ষতি করবে।’

রিজভী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যেসব সহযোগী দেশ দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে পালিয়ে গিয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগেরে মাধ্যমে কারখানা বন্ধ হওয়া বন্ধ করানো সম্ভব। দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য কারখানা বন্ধ হওয়া উচিত নয়। বর্তমানে মানুষ উদ্বিগ্ন যে, আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে দেশ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে।’

এসব বক্তব্যের মাধ্যমে রিজভী দেশের গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতিতে রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতা এবং সজাগ থাকার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।