দেশজুড়ে টানা বৃষ্টি এবং খারাপ আবহাওয়ার প্রভাবে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোর চিত্র এখন বেশ অবস্থা। বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় অনেক সবজির দাম চরমভাবে বাড়েছে। বিশেষ করে কাঁচামরিচের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, যা এখন কেজিতে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের দামও কয়েকদিনে তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন পরিস্থিতি ধরা পড়েছে। গ্রীষ্মমন্ডলীনের সবজির দামও বর্তমানে তুলনামূলকভাবে বেশি। বেগুন কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং কচুরমুখী ৭০ টাকায় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া সজনে কেজিতে ১৪০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ৩২০ টাকা এবং পেঁপে মাত্র ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, ইন্ডিয়ান গাজর ১৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, দেশি শসা ৮০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতা কেজিতে ৪০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ২০ টাকা, চাল কুমড়া পিস প্রতি ৪০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৪০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া কেজিতে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাক-সবজির মধ্যে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি হিসেবে, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আলুর দামও বেড়ে বর্তমানে কেজি প্রতি ৩০ টাকা হয়েছে। দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির বাজারেও বেড়েছে দাম। সোনালি কক মুরগির দাম কেজিতে ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৭০ টাকা, লাল লেয়ার ২৯০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা, ব্রয়লার ১৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ডিমের বাজারেও বাড়তি দাম পড়েছে; লাল ডিমের এক ডজন ১২০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ করে সবজির মূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ সমস্যায় পড়েছেন। ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, বৃষ্টির অজুহাতে বিক্রেতারা জ্বালানি, পরিবহন খরচসহ নানা কারণে সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছেন। মিরপুর ৬ নং বাজারে ক্রেতা আবুল হোসেন জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে যে দাম ছিল তার চেয়ে এখন সবজির দাম অনেক বেশি। দোকানিদের বক্তব্য, টানা বৃষ্টির কারণে মাঠ থেকে তাজা ফসল সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে; বিশেষ করে নিচু জমিগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় ফসল তোলা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পরিবহনে অতিরিক্ত খরচের ফলে দাম বেড়েছে। মাছের বাজারেও গত তিন-চার দিনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। বিশেষ করে ইলিশ মাছ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বড় আকৃতির ইলিশের দাম কেজিতে ২৫০০ টাকা ছাড়িয়েছে, এবং সাতশত থেকে আটশ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া ছোট ও মাঝারি ওজনের দেশি নদী মাছ পাওয়া কঠিন। মাগুর মাছ কেজিতে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিকৃত হচ্ছে। এছাড়া, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া এবং কই মাছ ২২০ থেকে ২৩৫ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, এবং খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে, আদার দাম ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা এবং ভারতীয় রসুন ১৮০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা এবং খেসারির ডাল ১৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। চালের দামের মধ্যে মিনিকেট চালের কেজি ৮২ থেকে ৯২ টাকা, নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং ২৮ সংখ্যার চাল ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে নিম্নআয়ের জন্য এই বাড়তি খরচ অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
