ঢাকা | রবিবার | ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ঘোষণায় ইসলামি বিশ্বের ৩১ দেশের তীব্র নিন্দা

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ সম্পর্কিত বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আরব ও ইসলামি বিশ্বের ৩১টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একযোগে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রিগণের ফিলিস্তিন ভূমি ভাগাভাগির ঘোষণার প্রেক্ষিতে এই প্রতিবাদ ও সমালোচনা উচ্চারণ করা হয়।

গত শনিবার একটি যৌথ বিবৃতিতে এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আরব লীগ, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) প্রধানরা নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেন। সৌদি প্রেস এজেন্সির মাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু এবং তার মন্ত্রিসভার বক্তব্য আরব বিশ্বে জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যে সরাসরি হুমকি।

এই বিবৃতিতে সংগঠিত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বাহরাইন, চাদ, কোমোরোস, জিবুতি, মিশর, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন। আরব লীগ, ওআইসি ও জিসিসি প্রধানদেরও এই বিবৃতিতে অংশগ্রহণ ছিল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জাতিসংঘের সনদের ২য় ধারা, ৪র্থ অনুচ্ছেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, যেখানে বলপ্রয়োগ বা তার হুমকি ঋদ্ধভাবে নিষিদ্ধ, সেখানে শান্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে যা সব রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে অবদান রাখবে।

তাদের মধ্যে একজন ইসরায়েলি কট্টরপন্থী মন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচের পশ্চিম তীরের ‘ই ওয়ান’ এলাকায় বহুতল বসতি নির্মাণ ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে দেওয়া বর্ণবাদী বক্তব্যকে তারা তীব্রভাবে অবজ্ঞা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আবারও ইসরায়েলের ‘আগ্রাসন, গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলের অপরাধ’ অব্যাহত রাখার কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং গাজা অঞ্চলে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে তারা ইসরায়েলের পরিকল্পিত অনাহার নীতি বন্ধ করে মানবিক সহায়তা নিঃশর্ত প্রবেশের দাবি জানান।

এদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলিও এই বসতি বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে জার্মানি ‘ই ওয়ান’ বসতি এবং মা’আলে আদুমিম সম্প্রসারণের কারণে পশ্চিম তীর দু ভাগে বিভক্ত হয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের চলাচলে ব্যাপক বাধা সৃষ্টি হবে এবং পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনকে বিচ্ছিন্ন করার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

জার্মানির বক্তব্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের এই একপক্ষীয় উদ্যোগ নিজস্ব জ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মানবাধিকার এবং শান্তি রক্ষার প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করছে। এটি সরাসরি সংঘাতের মাত্রাই বৃদ্ধি করছে এবং বিস্তৃত ও ন্যায়সম্মত শান্তির সম্ভাবনাকে কঠোরভাবে ক্ষুণ্ন করছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সাল থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল নিরবিচ্ছিন্ন বিমান হামলা চালিয়ে আসছে, যা খাদ্য সংকট ও অতাত্ত্বিক দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি, গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা খোলার জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। অপরাধের এই জটিল তদন্তের কারণে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার বিভাগের সামনে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।