ঢাকা | বুধবার | ২৩শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

বাংলাদেশে ইংলিশ মাস্টারক্লাস: পিটার বাটলারের নতুন অধ্যায়

“যে কোনো পরিস্থিতিতে সঠিক কাজটি করো, যা সবার জন্য ভালো।” বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলারের এই বাক্যই তার সিগনেচার ট্যাগলাইন। দলীয় সভা কিংবা ব্যক্তিগত আলাপে তিনি বারবার এই কথা মনে করিয়ে দেন ফুটবলারদের। তবে প্রশ্ন জাগে, ‘সবাই’ বলতে কারা বোঝানো হচ্ছে? আর ‘সবার জন্য ভালো’ বলতে আসলে কী উদ্দেশ্য রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বোঝা যায়, বাটলারের কাছে ‘সবার’ অর্থ হল বাংলাদেশ দল, আর ‘সবার জন্য ভালো’ মানে দল ও দেশের জন্য সর্বোত্তম পারফরম্যান্স প্রদর্শন করা। হয়তো এই স্পষ্ট মনোভাবের কারণেই বাটলার এবং তার দল বাংলাদেশ নিয়ে আজ আলোচনা হচ্ছে।

দুটি পরপর সাফ টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের জয়গান এখন সারা দেশের মুখে। তবে বাংলাদেশের নারী ফুটবল কি শুধু দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বেই সন্তুষ্ট থাকবে? এশিয়ার মঞ্চে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করাই এখন মূল লক্ষ্য। তাই বাটলার দেশের বাহিরেও শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলতে বেশি করে ম্যাচ আয়োজন করতে চেয়েছেন। তার ফলাফল দেখতে পেতেই অতিরিক্ত অপেক্ষা করতেই হয়নি।

গত বুধবার সন্ধ্যায় বাটলারের বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এশিয়ার বুকে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছে। অবশ্য জয়টা সহজভাবে আসেনি; আগেও দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, কিন্তু এশিয়ান মঞ্চে এতটাই দাপুটে খেলেছে কি? প্রথমবার বাছাইপর্ব থেকে বাহরাইনকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে তারা পথ প্রশস্ত করে, এরপর মিয়ানমারকে হারিয়ে এশিয়ান কাপ খেলার যোগ্যতাও নিশ্চিত করে। রক্ষণ, মাঝমাঠ এবং আক্রমণে দল এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এই সাহসী ও প্রতিভাবান দলকেই বাটলারের বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিতি পেতে হচ্ছে।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই কোচ ২০২২ সালের শুরুতে বাফুফের এলিট একাডেমির দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। একই বছরে নারী দলের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের জাতীয় দল চালানোর অভিজ্ঞতা থাকায় তিনি দক্ষভাবে বাংলাদেশ দলে নিজস্ব পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। দলে কেউই জায়গা নিশ্চিহ্ন নয়, পুরো ৯০ মিনিটে সমান মান বজায় রাখতে হবে, এটাই তার মন্ত্র। বিদ্রোহী মনোভাব দেখানো খেলোয়াড়দের সঙ্গে কোনো আপস হয়নি। কিন্তু দরকারে পেছনে ঠেলে দেননি, বরং তাদের থেকে প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় দলে ফিরিয়েছেন।

বাটলারের দলে ব্রিটেনের প্রচলিত ‘ডিরেক্ট স্টাইল’ ফুটবল নেই; বরং হাই প্রেসিং, বল দখল করে যৌথ খেলা, উইং প্লে ও দ্রুত আক্রমণই প্রধান কৌশল। বাংলাদেশী খেলোয়াড়রা আগে থেকেই প্রযুক্তিগতভাবে ভালো, এখন তাতে যোগ হয়েছে ট্যাকটিক্যাল ও ফিজিক্যাল সক্ষমতা। ফুটবল খেলার মৌলিক তিনটি “এস” – স্পিড, স্ট্রেংথ ও স্ট্যামিনা – বাটলারের দলে সুন্দরভাবে দেখা যায়। যদিও উন্নতির জায়গাও আছে, তবে প্রত্যাশা রাখা হচ্ছে এই দল যদি নির্ধারিত পথে এগোয়, তাহলে তারা শুধু এশিয়ান মঞ্চই নয়, বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে।

লেখক: রাশেদুল ইসলাম, সাবেক ফুটবলার, জাতীয় দল