ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহ এলাকার কমপক্ষে ২৩ থেকে ২৬ জেলার একমাত্র প্রবেশপথ হিসেবে বিবেচিত টাঙ্গাইলের যমুনা সেতু যমুনা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সেতু, যা টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলাকে সংযুক্ত করে। চলতি বছরের ১৮ মার্চ যমুনা নদীর উপর নির্মিত নতুন যমুনা রেল সেতু উদ্বোধনের পর থেকে রেল যোগাযোগ বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়েছে, ফলে পুরোনো যমুনা সেতুর ওপর থাকা রেলপথটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না এবং এটি বর্তমানে পরিত্যক্ত। এই অব্যবহৃত রেললাইন অপসারণের উদ্যোগ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে যমুনা সেতু বিভাগ, যার মাধ্যমে সেতুর ওপরের সড়কপথকে আরও প্রশস্ত করা হবে।
যমুনা সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সেতুর প্রতিটি লেনের প্রস্থ ৬.৩ মিটার, যেখানে হওয়া উচিত ৭.৩ মিটার। পুরোনো রেললাইন সরিয়ে ফেলা হলে প্রায় ৩.৫ মিটার অতিরিক্ত স্থান সড়ক প্রশস্তকরণে ব্যবহার করা সম্ভব হবে, যা দুই লেনে ভাগ করে ব্যবহার করা হবে। এই প্রশস্তকরণের ফলে বিশেষ করে ঈদের মতো সময় যানবাহনের চাপ থেকে সৃষ্ট দীর্ঘ যানজট অনেকটাই কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও যমুনা সেতু বিভাগ পৃথকভাবে রেললাইন অপসারণের প্রস্তাবনা পাঠায়, যা থেকে এই অপসারণ প্রকল্প শুরু হয়। এতে সেতুর দুই লেনে প্রতি পাশে ১.৭৫ মিটার বিজ্ঞাপিত স্থান বাড়বে এবং মোট সড়কপথের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পাবে, যা যানজট ও জনদুর্ভোগ কমাতে সহায়ক হবে।
তিনি আরও জানান, যমুনা সেতুর পূর্ব পাশের সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য কারিগরি স্টাডির মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে, যা সম্পূর্ণ কার্যকর হতে কিছু সময় লাগবে। অপসারণের কাজ শেষে পুরোনো রেললাইন ও অন্যান্য সামগ্রী রেল কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হবে।
১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল ও সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট থেকে এখানে ট্রেন চলাচল শুরু হয় এবং ঢাকা-উত্তরাঞ্চল রেল যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুতে ফাটল ধরা পড়ার পর ট্রেন গতি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটারে কমিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে সেতু পারাপারে বেশি সময় লাগে এবং ট্রেনের জটলা সৃষ্টি হয়।
এই সমস্যার সমাধানে সরকার ২০২০ সালে সেতুর ৩০০ মিটার উত্তরে নতুন একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। একই সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল উপস্থাপনে নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। দীর্ঘ ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতুটি দেশের প্রথম ডুয়েল গেজ ও ডাবল ট্রাকের সেতু হিসেবে নির্মিত হয়েছে, যার নির্মাণে ৫০টি পিলার এবং ৪৯টি স্প্যান ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রাথমিক অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, পরে মেয়াদ বাড়ার ফলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি, যার মধ্যে ২৭.৬০ শতাংশ স্থানীয় অর্থায়ন এবং ৭২.৪০ শতাংশ জাপানের জাইকা ঋণ দিয়েছে।
গত ২৬ জুন থেকে টাঙ্গাইল অংশে রেলপথের নাট-বোল্ট খুলে পুরোনো রেললাইন অপসারণ শুরু হয়েছে, যা সম্পন্ন হলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক ও সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে যানজটের সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।