ঢাকা | শনিবার | ১৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

রাষ্ট্রদূত মাসদুপুইয়ের বিশ্বাস, বাংলাদেশের নির্বাচন হবে সর্বোচ্চ অন্তর্ভুক্তিমূলক

ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সর্বোচ্চ অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকার ‘মুক্ত ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত থাকায় আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন তার কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করবে। নির্বাচন যতটা সম্ভব অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে এইটাই তাদের উদ্দেশ্য।’’

রাষ্ট্রদূত আবারও উল্লেখ করেন, নির্বাচনটি কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে তা নির্ভর করবে প্রস্তুতির মান ও প্রয়োগের উপর। তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই আমরা জানি, বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ রয়েছে। ওই দল এখনও নিজেদের সংস্কার এবং ক্ষমা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে এবং কিছু নেতার বিচার চলমান আছে। সে পর্যন্ত তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে, যা আমরা বুঝতে পারছি।’’

মাসদুপুই আরও বলেন, ‘‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে শুধু বড় দলগুলোর অংশগ্রহণ নয়, ছোট ও স্বতন্ত্র দলগুলোরও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। যত বেশি দল থাকবে, নির্বাচন তত বেশি বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।’’

চলতি বছরের মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় প্রশাসনিক গেজেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সব প্রকার কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ‘মুক্ত ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে এবং ফ্রান্স এই উদ্যোগকে সমর্থন করে। পাশাপাশি, প্রয়োজনে ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়ে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিল মাসে হওয়ার সম্ভাব্য ইঙ্গিত রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ঢাকায় ফরাসি দূতাবাসে ফ্রান্সের জাতীয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের মূল হলো স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও অন্তর্ভুক্তি। বাংলাদেশ প্রধান উপদেষ্টার বিচক্ষণ নেতৃত্বে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। পথে অসংখ্য বাধা আসবে, তবে দৃঢ় প্রত্যয়ে তা পেরোয়া সম্ভব।’‘

এয়ারবাস বিমানের ক্রয় নিয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘‘আলোচনা এখনো চলছে, কোনো চুক্তি বন্ধ হয়নি।’’

বর্তমানে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বোয়িং বিমান কেনার কথাও বিবেচনা করছে, যা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘আমরা চাই বিমান বহরে এয়ারবাস ও বোয়িং উভয় ধরনের প্লেন থাকুক, যাতে যাত্রীদের কাছে বৈচিত্র্যময় ও সুবিধাজনক সেবা পৌঁছায়।’’

গত জুনে লন্ডনে এয়ারবাসের নির্বাহী সহ-সভাপতি ওয়াউটার ভ্যান ওয়ার্স প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এয়ারবাস শুধুমাত্র যাত্রীবাহী বিমানই নয়, হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান ক্ষেত্রেও দক্ষতা রাখে। বাংলাদেশ যদি এয়ারবাস বিমানের বহরের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে রপ্তানি ঋণ সংস্থা থেকে ৮৫ শতাংশ অর্থায়ন পাওয়া সম্ভব হবে।

রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই বলেন, ‘‘ফ্রান্স অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কারকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে এবং সরকারের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সবসময়ই ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ।’’

তিনি আরও জানান, ফ্রান্স বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণে স্যাটেলাইট ডেটার মাধ্যমে সার্বভৌম সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মহাকাশ প্রযুক্তিতে নতুন সহযোগিতা দেবে। উন্নয়ন ও কৌশলগত স্বয়ংসম্পূর্ণতায়ও ফ্রান্স সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।