সেনেগালে জাতিসংঘ চালু করেছে এক অভিনব উদ্যোগ, যা পুরুষদের আরও বেশি দায়িত্ববান ও সচেতন করে তুলছে। এর নাম ‘স্কুল ফর হ্যাবেন্ড’, যেখানে মূলত পুরুষদের জন্য শেখানো হয় কিভাবে তারা আরও ভালো স্বামী, বাবা ও পরিবারের সদস্য হতে পারেন। একদিন এই স্কুলের অভ্যন্তরে ঘুরে দেখেছে বার্তা সংস্থা এপি। সেখানে দেখা যায়, ইমাম ইব্রাহীম ডায়ান ক্লাসে পুরুষদের গৃহস্থালি কাজের প্রতি আরও সাহায্য করার প্রয়োজনীয়তা বোঝাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘নবীজি (সা.)ও বলেছেন, যে পুরুষ তার স্ত্রী ও সন্তানের পেছনে অবদান রাখে না, সে সত্যিই ভালো মুসলিম নয়।’ পৌরুষের দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে এই বার্তা প্রাচীন ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেনেগালসহ পশ্চিম আফ্রিকান দেশগুলোর বেশিরভাগ সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরুষের কথাই মূল। পরিবার পরিকল্পনা, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বা ব্যক্তিগত বিষয় সবাই পুরুষের অনুমতি নিয়ে হয়। এই চিত্র বদলাতে জাতিসংঘ উদ্যোগ নিয়েছে এই বিশেষ কর্মসূচি, যার মূল লক্ষ্য সমাজের পুরুষ সদস্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যচেতনা, অর্থনৈতিক সচেতনতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলা।
ইমাম ইব্রাহীম বলেন, তিনি ধর্মীয় প্রেক্ষাপট ব্যবহার করে ইতিবাচক পুরুষত্ত্ব শেখাচ্ছেন। কারণ, এই অঞ্চলের মানুষ ধর্মের প্রতি খুবই সংবেদনশীল। তিনি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, এইচআইভি ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে খোলোামেলা আলোচনা করেন। শুক্রবার জুমার খুতবায়ও তিনি এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন। নারীরা তাঁর খুতবা ও ক্লাসের প্রশংসা করেন, বলছেন এর ফলে তাঁদের স্বামীদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। অনেক পুরুষ নিজেকে উন্নত করে তুলতে চান, যেমন হাবিব ডিয়ালো, যিনি ৬০ বছর বয়সে লিখেছেন, তাঁর ঘরে সন্তান জন্মদানে কতটা ঝুঁকি থাকলে তিনি সন্তানদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকেন।
২০১১ সাল থেকেই সেনেগালে এই কর্মসূচি চালু হয়েছে। বর্তমানে দেশের নারীতণ্ড কার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এই উদ্যোগ, যা মাতৃত্বকালীন মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে বিবেচিত। নাইজার, টোগো, বুরকিনা ফাসোসহ অন্য কিছু আফ্রিকার দেশেও চালু রয়েছে এই ‘হ্যাবেন্ড ফর স্কুল’ কর্মসূচি। জাতিসংঘ বলছে, এর ফলস্বরূপ নারীর স্বাস্থ্য নানা দিক থেকে উন্নত হয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে নারী অধিকার, লিঙ্গ সমতা, নিরাপদ যৌনতার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। সেনেগালে প্রায় ২০টি স্কুলে বর্তমানে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে লক্ষ্য ধরা হয়েছে প্রায় ৩০০ পুরুষকে প্রশিক্ষিত করার। সেই পুরুষরা নিজেদের এলাকায় এসব জ্ঞান ও সচেতনতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
প্রকল্পে কারা অংশ নিতে পারবেন, তা নির্ধারণের দায়িত্বও জাতিসংঘের। সমাজে যারা সম্মানিত, নারী অধিকার জানেন, নেতৃত্বের গুণ সম্পন্ন—তাদের বাছাই করা হয়। তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে সমাজে নিজেদের ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেন। কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে সেটা বাছাই প্রক্রিয়া চলাকালে, স্থানীয় নেতাদের ও সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদের মতামত নেওয়া হয়।
খারি নডেয়ে, এক নারী, জানান, তার স্বামী আগে কাজে হাত লাগাতেন না, কিন্তু এখন তিনি রান্না করে থাকেন এবং পরিবারে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন।
বিশ্বে মাতৃমৃত্যুর হার এখনো উদ্বেগজনক, ২০২৩ সালে প্রতি ১ লাখ শিশুর জন্মে ২৩৭ জন মা মারা গেছেন, আর শিশুর মৃত্যুহার ২১per হাজার। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে ৭০ per লাখে নামিয়ে আনবে তারা। পাশাপাশি নবজাতকের মৃত্যুও কমানোর লক্ষ্য রয়েছে, যা এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ।”}]“`}]}]}