মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, কানাডা থেকে আমদানি করা বিবিধ পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। বৃহস্পতিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে পাঠানো এক চিঠিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত এএফপি প্রতিবেদনে জানা যায়, গত সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের কাছে ২০টির বেশি এমন চিঠি প্রেরণ করেছেন। এ পদক্ষেপগুলি মূলত চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে, যার লক্ষ্য আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানো। তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক হুমকির কারণে আলোচনা অপ্রতিশ্রুতিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে।
কানাডা ও মেক্সিকো দুই দেশই ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে উত্তর আমেরিকার তিন দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ইউএসএমসিএ) সঠিক পথে ধাবিত হয়। ২০২০ সালের জুলাই মাসে পুরাতন নাফটা বাতিল করে ইউএসএমসিএ চালু হয় এবং ২০২৬ সালের জুলাইয়ে এর পরবর্তী পর্যালোচনা নির্ধারিত। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে আসার পর ট্রাম্প শুল্ক আরোপের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় বিব্রত সৃষ্টি করেছেন।
শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল কানাডা ও মেক্সিকোর বহু পণ্যের ওপর, যদিও কানাডার জ্বালানি পণ্যে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্প বাণিজ্যের পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচারও যথাযথভাবে প্রতিহত না করার অভিযোগে এই প্রতিবেশী দুই দেশকে একাধিকবার সমালোচনা করেছেন। পরে ইউএসএমসিএতে থাকা পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়, যা অনেক পণ্য শুল্কমুক্ত হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবা’র চিঠি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ট্রাম্প ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নির মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সম্পর্ক কিছুটা উন্নতির ইঙ্গিত দিয়েছিল। গত ৬ মে কার্নি হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পরবর্তীতে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে পুনরায় দেখা হয়। ওই সম্মেলনে বিশ্বনেতারা ট্রাম্পকে বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
তাছাড়া, কানাডা আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কর আরোপ করলেও পরে তা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা আলোচনার পথ কিছুটা খোলাগুলো।
এনবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, যেসব দেশের কাছে এখনও এসব শুল্ক চিঠি যায়নি, তাদের ওপর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে এবং তা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ব্রাজিলের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সম্ভাবনাও রয়েছে, যদি আলোচনায় কোনও সমঝোতা না হয়।
ট্রাম্প বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্য দেশের জন্যও শুল্ক চিঠি ‘আজ অথবা আগামীকাল’ পাঠানো হবে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের হুমকির প্রেক্ষিতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী, তবে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছেন।
ট্রাম্পের চিঠিতে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর প্রতি আচরণ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। এই বাণিজ্য সংক্রান্ত টানাপোড়েন বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।