ঢাকা | মঙ্গলবার | ১২ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য এক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিতে সফল হওয়া: প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। এর সঙ্গে নির্বাচনী সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়াসমূহকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে তিনি এই তথ্য জানান।

প্রেস সচিব আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে। আজ ছিল সেই অধ্যায়ের প্রথম উপদেষ্টা পরিষদের সভা, যেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক ট্যারিফ কমানোর বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার ভূমিকা এবং জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

তিনি জানান, নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে পত্র প্রদান করেছে, এরপর কমিশন নিজেদের কাজ শুরু করবে এবং ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে। নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

প্রেস সচিব বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশের পাশাপাশি আনসার, বিডিআর ও আর্মিকে কিভাবে আরও বেশি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করানো যায়, তা সরকার আন্তরিকভাবে বিবেচনা করছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় খাদ্যের মজুদ ছিল প্রায় ১৮ লাখ টন, যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ২১ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত এক বছরে অধিকতর স্বাভাবিক হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার সাতটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যেসব কমিশনের ১২১টি প্রস্তাবের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৬টি বাস্তবায়িত হয়েছে, ৮৫টি প্রক্রিয়াধীন এবং বাকি ১০টির বাস্তবায়নযোগ্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে গাজীপুর ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি নামকরণের সিদ্ধান্তও আজকের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গৃহীত হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আইন-শৃঙ্খলার উন্নতির কথাও তিনি তুলে ধরেন। পুলিশ আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে এবং আর্মিকে ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চলতি সময় ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে এবং বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার কার্যক্রম তার নিজ উপস্থিতিতে সম্পন্ন হওয়া উচিত। তাদের বৈদেশিক উপদেষ্টারা তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বিবিসি ও আলজাজিরার অনুসন্ধানী রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে বলেন, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার প্রমান এসব রিপোর্টে স্পষ্ট রয়েছে এবং সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করা হবে।

প্রেস সচিব আরও বলেন, নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কার ও বিচার সরকার পরিচালনার অগ্রাধিকারমূলক কাজ। পূর্বে জাতীয় নির্বাচনে আট লাখের বেশি ফোর্স মোতায়েন থাকলেও এবার আরও ৪০-৫০ হাজার ফোর্স এবং আর্মির অতিরিক্ত ৬০ হাজার সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার ৩১৫টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে ২৪৭টির বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যা প্রায় ৭৮.৪১ শতাংশ এবং এটি স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সবোর্চ্চ।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামীর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে কোনো অভিযোগ নির্বাচনের কাছে আসার কথা নয়। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই এমন বিষয়গুলোর সমাধান হবে।