ঢাকা | বৃহস্পতিবার | ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে কিছুটা হতাশা প্রকাশ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপারে আমাদের মনে যে সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং ভক্তি ছিল, সেখানে এখন কিছুটা ছন্দ পতন হয়েছে বলে মনে করছেন গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি উল্লেখ করেন, এই হতাশা ও মোহভঙ্গ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে, যা সংস্কার প্রক্রিয়াকে আর ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে। সাধারণভাবে আমাদের সমাজে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেন, এই সরকারগুলো শুধুই অস্থায়ী সমাধান, যা অনেক সময় অকার্যকর হয়ে দাঁড়ায়।

গতকাল সোমবার ঢাকার হোটেল লেকশোরে, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ নামে একটি নতুন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মূল বাস্তবায়নকারী হিসেবে ছিলেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের ব্যাপারে ড. ভট্টাচার্য ব্যাখ্যা করেন, কতগুলো উদ্যোগ বা কোন কোন দিক কার্যকর হবে এবং কেন কিছু কিছু উদ্যোগ ব্যর্থ হবে—এসব বিষয় ভবিষ্যতে গভীরতর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হবে। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে অনেক সময় আমি ভুল করে ‘অন্তরীণ’ সরকার বলি। মাঝে মাঝে মনে হয়, যেন কেউ সরকারের দখল নিয়ে নিয়েছে।’

স্বাগত বক্তৃতায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের উপর এখন একটি বড় ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই ঝড়ের আঘাতে সর্বত্রই প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেছিলেন, ঝড়ের সময় মানুষ তার সবচেয়ে বড় সম্পদ—সংগঠন, শ্রম ও সম্পদ—রক্ষায় সচেতন হয়। তিনি উল্লেখ করেন, जुलाई মাসের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী চেতনা যে মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। পরিবর্তনের চেতনা ধরে রাখা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শতাধিক কমিশন এবং টাস্কফোর্স গঠন করে অনন্তকাল এই সংস্কার সম্ভব নয়। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, তিনি নিজেও অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়নে যুক্ত ছিলেন। তবে প্রথম দিকে যে উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল, সেটি এখন অনেকটাই স্তিমিত। অধিকাংশ কমিটি বা কমিশনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব দেখা যায়নি। তবে এতেও কিছু কিছু আলোচনা হয়েছে, কিন্তু সফলতা আসেনি। কি কারনে এই অগ্রগতি হচ্ছে না—এমন প্রশ্ন ওঠে। হয়তো স্বার্থের সংঘাত বা সক্ষমতার অভাব এর পেছনে কাজ করে। প্রশ্ন ওঠে, কি কারণে এই অন্তর্বর্তী সরকার পথ হারিয়ে ফেলছে?

‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ প্রকল্পের বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা দেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালে গৃহীত কর্মসূচি, নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার ও আলোচনাগুলো, এবং নির্বাচিত সরকারের অধিকার ও কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে পরিচালিত হবে। এই নাগরিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে দেশব্যাপী বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন, ব্যক্তিগত নেতৃবৃন্দ, বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীদের একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক। এই প্রকল্প বিভিন্ন স্তরের নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করবে।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির চেয়ারপার্সন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ, নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সুলতান আহমেদ, নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য শাহীন আনাম, রাশেদা কে চৌধুরী, আসিফ ইব্রাহীম, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, অর্থনীতিবীদ আনু মুহাম্মদ, এম.এম. আকাশ, ও সেলিম রায়হান।