ঢাকা | বৃহস্পতিবার | ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

অবিরাম রেমিট্যান্স প্রবাহে দশকের রেকর্ড, আগাস্টে ৯% বৃদ্ধি

চলতি বছরের আগস্টে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৪২ কোটি ডলার (২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার) পাঠিয়েছেন, যা অতীতের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। গত বছরের একই মাসে রেমিট্যান্স ছিল ২২৪ কোটি ডলার (২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার), অর্থাৎ আশি আজ আরও ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধি নিয়ে বলা হয়, চলতি বছরে আগস্টে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মাধ্যমে টানা ১৩ মাস ধরে দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশে। এর আগে ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ আরও জোরদার হয়, যেখানে ব্যাংকিং চ্যানেলে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ আসতে শুরু করে।

এদিকে, এই দুই মাসের (জুলাই ও আগস্ট) মোট রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৪৯০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এই সময়ে রেমিট্যান্সে ৭৬ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া যায়। এর আগে, জুলাই মাসে দেশে আসা রেমিট্যান্স ছিল ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার, যার বাংলাদেশের টাকা মূল্যায়নে প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। তবে এই মাসে কোনও ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসেনি।

অর্থবছর ২০২৪-২৫ এর মার্চ মাসে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। ওই অর্থবছরে মোট প্রবাসী আয় পৌঁছেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর, ২০২৩-২৪, রেমিট্যান্স ছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।

বিগত বছরগুলোতে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্সের প্রবাহ কিছু এই রকম ছিল: জুলাইয়ে ১৯১.৩৭ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২.১৩ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বর ২৪০.৪১ কোটি ডলার, অক্টোবর ২৩৯.৫০ কোটি ডলার, নভেম্বর ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বর ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিল ২৭৫ কোটি ডলার, মে ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুনে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।

সরকারের চরের সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমলেও, বর্তমানে রেমিট্যান্সের প্রবাহ এবং রপ্তানি বাড়ার ফলে রিজার্ভ আবার বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১.১৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ এখন ২৬.১৯ বিলিয়ন ডলার যা, সরকারের পতনের সময় ছিল ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলার। দেশের সর্বোচ্চ রিজার্ভের রেকর্ড ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, হুন্ডি ব্যবসা বন্ধ হলে ব্যাংকিং চ্যানেলে যাত্থা রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। এর ফলে ডলার বাজারে বাজারের পরিস্থিতি উন্নত হবে। ডলার সরবরাহের আধিক্য বাড়ায়, সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার নিলামে কিনছে।

একই সঙ্গে, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, বর্তমানে দেশে নতুন বিনিয়োগ কম হওয়ায় মূলধনী সরঞ্জাম আমদানির চাহিদা কিছুটা কম। তবে, বড় ধরনের নির্বাচনের পর নতুন সরকারের komstের সঙ্গে সঙ্গে আমদানি বাড়বে বলে ধারণা প্রকাশ করছে সংশ্লিষ্টরা। এটি পূর্বাভাস দেয় যে, তখন ডলার দর কেমন থাকবে, আর হুন্ডি ব্যবসা কি আবার চাঙ্গা হবে, তা দেখার বিষয়।

চলতি বছর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর বাজারভিত্তিক করে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে এবং বর্তমানে ডলার দর নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে।