ঢাকা | শুক্রবার | ১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে প্রজনন হার কমছে

বিয়ে ও সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ দিন দিন কমছে নানা কারণে, যার মধ্যে প্রধানটি হলো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং তরুণদের প্রজনন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতার অভাব। পেশাগত অবস্থা, অর্থনৈতিক স্থিতি, এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে অনেক তরুণই পরিবার গঠনে আগ্রহ হারাচ্ছে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও ইউ গভ সার্ভের যৌথ উদ্যোগে ১৪টি দেশে ১৪ হাজার তরুণের মধ্যে একটি সম্প্রতিক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে সোমবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আয়োজনকৃত আলোচনাসভায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বে জনসংখ্যার হ্রাস অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এটি এক পর্যায়ে বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে। সর্বশেষ “স্টেট অফ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিপোর্ট” জানাচ্ছে, বিশ্বে জনসংখ্যা ৮ বিলিয়নের নিচে নেমে আসা কোনো সমস্যা নয়, মূল চ্যালেঞ্জ হলো প্রজনন হারের কমে যাওয়া। এর ফলে বড় এক জনগোষ্ঠী সন্তান ধারণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষাও পূরণ হবে না।

জরিপে দেখা গেছে, অনেক তরুণের পরিবারের আকার বড় করবার ইচ্ছা থাকলেও আয়-ব্যয়ের অনিশ্চয়তা, কর্মসংস্থানহীনতা ও অর্থনৈতিক অসুবিধার কারণে তারা তা পূরণ করতে পারছে না। প্রায় অর্ধেকেরও বেশি তরুণ তাদের পছন্দ মতো সন্তান গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রতি চারজনের একজন পছন্দ মতো সময়ে সন্তানের পরিকল্পনা করতে পারেননি। ৪০ শতাংশ তরুণ এই কারণে সন্তান গ্রহণের পরিকল্পনা বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন।

তাছাড়া, প্রায় ১৩ শতাংশ তরুণ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকার হয়েছেন, আবার ১৪ শতাংশ উপযুক্ত সঙ্গীর অভাবে সন্তান দিতে পারেননি। ১৮ শতাংশের পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগও নেই।

আলোচনাসভায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, “ক্ষমতায়নের মূল ভিত্তি হলো অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা। আর্থিকভাবে সক্ষম হলে তরুণরা সহজে জীবন গঠন ও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। একটি ন্যায্য এবং সম্ভাবনাময় বিশ্ব গড়তে সমতা অর্জন অপরিহার্য, যা অর্জনে আমাদের সকল বাধা দূর করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “তরুণ প্রজন্মের সঠিক ক্ষমতায়নের জন্য প্রয়োজন উপযোগী শিক্ষা, সহায়ক পরিবেশ এবং সচেতনতা। সবাইকে মিলিত হয়ে তাদের প্রস্তুত করতে হবে।”

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান উল্লেখ করেন, “রাষ্ট্র গঠনে তরুণ সমাজের অবদান অনস্বীকার্য। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং ও রোবটিকসের উন্নতির সঙ্গে কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসছে, যা মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, “বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা ৮২৩ কোটি ৪৫ লাখের বেশি এবং প্রতিমিনিটে প্রায় এক হাজার ২৫০ জন জন্ম নিচ্ছে, এক হাজারের মতো মানুষ মারা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে জনসংখ্যা ২০৫৬ সালে এক হাজার কোটি হবে এবং ২০৯৮ সালে ১ হাজার ৯০ কোটিতে পৌঁছাবে, এরপর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। বাংলাদেশে প্রতি বর্গমাইল ৩২৭২ জনের ঘনত্ব থাকায়, প্রতি ৫০০ বর্গমাইলে একটি করে মেডিকেল কলেজ রয়েছে, যা বিশ্বে অনন্য। এত বেশি ঘনবসতিপূর্ণ অবস্থায় এত মেডিকেল কলেজ থাকা বিরল।”

পরিলক্ষিত হচ্ছে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সামাজিক পরিবেশ তরুণদের পরিবার পরিকল্পনায় বড় বাঁধা। দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা গুরুত্ব বহন করছে। তরুণদের সক্ষম করে তোলাই হবে জাতির উন্নয়নের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।