ঢাকা | বৃহস্পতিবার | ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

আগস্টে গণপিটুনির হত্যা বেড়েছে, জুলাইয়ের তুলনায় বেশি

দেশে গণপিটুনির ঘটনাগুলোর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগস্ট মাসে কমপক্ষে ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যা জুলাইয়ের চেয়ে অনেক বেশি। জুলাই মাসে এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ছিল ৫১, যেখানে আগস্টে নিহত হয়েছেন ২৩জন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন ৪৩জন। অপরদিকে, জুলাইয়ে এ কারণে নিহত হন ১৬জন।

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) আগস্ট মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রোববার এই প্রতিবেদনের বিস্তারিত বিবরণ তারা গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন। প্রতিবেদনটি প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুসারে, দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তদারকি ও গবেষণার ভিত্তিতে প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণপিটুনির শিকার নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ১০ জনকে চুরির অভিযোগে, ৪ জন সন্দেহজনক চুরির, ৩ জন ডাকাতির, ১ নারীসহ ২ জন পূর্বশত্রুতার জেরে, ১ জন মাদক মামলার আসামি, ২ জন ছিনতাইয়ের অভিযোগে এবং ১ জন চাঁদাবাজির অভিযোগে হত্যা করা হয়।

সাংবাদিক নির্যাতন ও হিংসা

আগস্টে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৩৩টি ঘটনার মধ্যে মোট ৯৬ সাংবাদিক হামলা, হুমকি, আইনি হয়রানি, হত্যার শিকার হয়েছেন। এর আগের মাস জুলাইয়ে এ ধরনের ঘটনা ছিল ৩০টি, যা তুলনামূলকভাবে তিন গুণ বেশি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগস্টের ঘটনায় অন্তত একজন সাংবাদিক নিহত এবং ৩৬ জন আহত হয়েছেন। ১৬ জন সাংবাদিক লাঞ্ছিত ও হুমকির শিকার হন, ২০ জনের চাকরি হারানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে, আগস্টে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের মোট ঘটনা ৩৩টি। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএনপি, পুলিশ, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসী সংগঠন, চোরাকারবারি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনজিও, পেশকার, দুষ্কৃতকারীদের হামলা। ৭ আগস্ট গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় দুর্বৃত্তরা দৈনিক প্রতিদিনের গাজীপুর স্টাফ রিপোর্টার মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে।

এমএসএফের সাইদুর রহমান বলেন, সাংবাদিকের ওপর নির্মম নির্যাতনের প্রতিকার খুবই কম হয়। আইনানুগ কোনও ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, পুলিশ কিংবা স্থানীয় প্রশাসন থেকে সহায়তা পাওয়া যায় না। এজন্য সাংবাদিকরা পিছিয়ে পড়ে।

রাজনৈতিক সহিংসতা

গত মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘর্ষে মোট ৫৪৯ জন আহত ও দুইজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৪৯টি সহিংস ঘটনায় পার্টি অফিস, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতার মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও অন্য দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে ঘটে। সংঘর্ষের মোট ৩৮টি ঘটনায় মূলত বিএনপি অন্তর্দ্বন্দ্ব, দলীয় বিরোধ বা সংঘর্ষমূলক পরিস্থিতি ছিল।

কারা হেফাজতে মৃত্যু

অগাস্টে কারাগারে থাকা অবস্থায় ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবশেষ মাসে ৩ জন হাজতি, ৭ জন কুমেক ও মাননীয় কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। বিভিন্ন কারাগারে (ঢাকা, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, নড়াইল, রাজশাহী, রাঙামাটি, শরীয়তপুর) এসব ঘটনায় এসব মৃত্যু ঘটে।

সংখ্যালঘু নির্যাতন

অগাস্টে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ১০টি ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, ধর্ষণ, জমি দখলের ঘটনা রয়েছে। কিছু ঘটনায় গুজব ছড়িয়ে সামাজিক বিভাজনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিছু জাতিগোষ্ঠীর বসতঘর ভেঙে যাওয়ারও আশঙ্কা জন্মেছে।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা

অগাস্টে নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতনের ঘটনা ৩৪৯টি। গত মাসের তুলনায় یہ ৩টি কম। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৭টি, এর মধ্যে ১১টি শিশু এবং ১৭ জন কিশোরী। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬ জন কিশোরী ও ৯জন নারী। একই সঙ্গে ৪টি ধর্ষণ ও হত্যা, ২৪টি ধর্ষণের চেষ্টা, ২১টি যৌন হয়রানি ও ৯৪টি শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।