ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি সংসদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে ছাত্র-শিক্ষক
কেন্দ্রের (টিএসসি) কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
শনিবার (২৬ জুলাই) এক সম্মিলিত বিবৃতিতে এই নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। এর আগে, আবৃত্তি
সংসদের পক্ষ থেকে তালা ভেঙে রুম দখল চেষ্টার অভিযোগ করা হয়। তবে, টিএসসির
ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের মতে, দুইপক্ষের সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
বিবৃতি দেওয়া টিএসসির সংগঠনগুলো হলো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুইজ সোসাইটি, ফিল্ম
সোসাইটি, টুরিস্ট সোসাইটি, আইটি সোসাইটি, সাংস্কৃতিক সংসদ, নাট্য সংসদ, জয়ধ্বনি
সাংস্কৃতিক সংসদ, প্রভাতফেরী সাংস্কৃতিক সংসদ, ক্যারিয়ার ক্লাব, ডান্স ক্লাব, ছায়া
জাতিসংঘ, গবেষণা সংসদ, সাহিত্য সংসদ, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, বাঁধন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিট ও ব্যান্ড সোসাইটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের
রুমটি ফাঁকা হয় এবং টিএসসিতে সে সময়কার সকল নেতৃবৃন্দদের সম্মতিতে রুমটিকে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডান্স ক্লাবকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
এতদিন পরে এসে হুট করে আবৃত্তি সংসদ রুমটিকে শুধুমাত্র নিজেদের বলে দাবি করে এবং
ডান্স ক্লাবের নেমপ্লেটসহ সবকিছু মুছে দিয়ে নতুন তালা লাগিয়ে দেয়। এটা নিতান্তই
অযৌক্তিক এবং আবৃত্তি সংসদ অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে এ ধরণের মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে
যাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এমতাবস্থায় টিএসসির সংগঠনগুলো গতকাল (শুক্রবার) বিকাল সাড়ে
তিনটায় একটি সম্মিলিত সভার আহ্বান করে। সভায় উপস্থিত হতে আবৃত্তি সংসদের সভাপতি,
সাধারণ সম্পাদককে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অনলাইন ও অফলাইনে যোগাযোগ করার ক্রমাগত
চেষ্টা চালায়।
আবৃত্তি সংসদের নেতাদের যেখানে স্বেচ্ছায় সভায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল, সেখানে
বারবার যোগাযোগ করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। পরবর্তীতে
সভায় উপস্থিত সবার সম্মতিতে আবৃত্তি সংসদের এহেন কর্মকাণ্ডে নিন্দা প্রস্তাব পাস
হয়।
এছাড়া, ডান্স ক্লাবের কর্মশালা বিবেচনায় নিয়ে, সংশ্লিষ্ট রুমটিকে পরবর্তী মিটিংয়ে
আগ পর্যন্ত শুধুমাত্র ডান্স ক্লাবকে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় এবং দুটি সংগঠনের
পারস্পরিক সমস্যাগুলো টিএসসির বাহিরে ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বাহিরে অবহিত করার জন্য
পরবর্তী মিটিংয়ে ডান্স ক্লাব ও আবৃত্তি সংসদকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, টিএসসির বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও আবৃত্তি সংসদের
কার্যনির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ ১৫-২০ জনের উপস্থিতিতে রুমে নতুন তালা স্থাপন
করে ডান্স ক্লাব ও আবৃত্তি সংসদকে চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আবৃত্তি সংসদ এখন
পর্যন্ত রুমটিকে শুধুমাত্র নিজেদের বলে দাবি করছে ও আক্রমণাত্মক অবস্থান ধরে
রেখেছে। যেটা নিতান্তই অযৌক্তিক।
পড়ুন: ঢাবির টিএসসিতে আবৃত্তি সংসদের তালা ভেঙে রুম দখল চেষ্টার অভিযোগ
বিবৃতিতে বলা হয়, অনলাইন প্রচারণায় ‘তথাকথিত টিএসসি প্রতিনিধি’ শব্দটি ব্যবহার করা
হচ্ছে। অথচ, গত ০৬ মে টিএসসি পরিচালকের উপস্থিতিতে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে চারজন
প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত চারজন প্রতিনিধি হচ্ছেন গবেষণা সংসদের সাধারণ
সম্পাদক শাহরিয়ার নাজিম সীমান্ত, আবৃত্তি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিজা বিনতে
শামস, কুইজ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাতাসিম বিল্লাহ ইমন ও সাংস্কৃতিক
সংসদের সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান রাকামনি।
ওই বিবৃতিতে সভায় উপস্থিত ১৬টি সংগঠনের নেতাদের বাইরে গিয়ে শুধু মোহাতাসিম বিল্লাহ
ইমন ও শাহরিয়ার নাজিম সীমান্তকে নিয়ে অনলাইনে বিস্তর অপপ্রচাররের তীব্র প্রতিবাদ
জানানো হয়।
এ বিষয়ে আবৃত্তি সংসদের সভাপতি মো. শাহ সুফি ওয়াসি মিয়া বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে
অভিযোগ সেটি প্রশাসন পর্যন্ত গিয়েছে এবং বিষয়টি প্রশাসন দেখছে। আর এই মিটিং এ
আমাদের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
এর আগে, নৃত্য সংসদের সাবেক সভাপতি আবুজার গিফারীর বিরুদ্ধে আবৃত্তি সংসদের রুমের
তালা ভেঙে রুম দখল চেষ্টার অভিযোগ তুলেন ওয়াসি মিয়া।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে আবুজার গিফারি কয়েকজন বহিরাগতকে সঙ্গে নিয়ে রুমের তালা
ভাঙেন বলে অভিযোগ তার।
আবৃত্তি সংসদ এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগও দিয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে টিএসসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ফারজানা বাসার ইউএনবিকে বলেন, ‘দুইপক্ষের মধ্যে
সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে কাল বিষয়টি ঠিক করে দিব।’
এরআগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ ইউএনবিকে
বলেছিলেন, রবিবারে এই দুই সংগঠনের সঙ্গে টিএসসির পরিচালক বসবেন। আমাদের দুইজন
সহকারী প্রক্টরও থাকবেন সেখানে।