ঢাকা | রবিবার | ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শুভ জন্মাষ্টমী পালিত

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মতিথি ও শুভ জন্মাষ্টমী ঘরোয়া ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে পূজা-অর্চনা, ধর্মীয় আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুর ২ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের থানা গেট সংলগ্ন এলাকায় পূজা ও প্রার্থনাও সম্পন্ন হয়।

আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. অরবিন্দ সাহা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নয়ন কুমার রাজবংশী, আইন প্রশাসক অ্যাড. সুব্রত কুমার চক্রবর্তী, ঝিনাইদহ জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও উপসচিব রথীন্দ্রনাথ রায়।

প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ এবং বিশেষ আলোচক হিসেবে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার রায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহা. শাহীনুজ্জামান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ছিলেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব বজায় রাখা হয়। তিনি কুরআনের বাণী উদ্ধৃত করে বলেন, ‘‘কেউ অন্য ধর্মের অবতারকে গালি দেবেন না।’’ মদিনা সনদেও নবীগণ অন্যান্য ধর্মের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। তিনি সকলকে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে সংকীর্ণতা পরিহার করার আহ্বান জানান এবং আশ্বাস দেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধর্মের উপর সমান মর্যাদা দেওয়া হবে। মানবিকতা হল সব ধর্মের মূলমন্ত্র এবং সম্প্রতি তিনি ‘‘ইসলামিক অ্যান্ড কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন’’ নামে নতুন ফ্যাকাল্টি প্রতিষ্ঠা করেছেন যা হিন্দুধর্ম সহ অন্যান্য ধর্মের গবেষণা ক্ষেত্র প্রসারিত করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘‘হিন্দু ধর্ম মতে, যখন পৃথিবীতে অধর্মের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, তখন শ্রী কৃষ্ণ অবতার হয়ে দুষ্টদের দমন এবং শিষ্টদের রক্ষা করেন। আমাদের উচিত ধর্মীয় পার্থক্য ভুলে, মানুষ হিসেবে একে অপরের পাশে থাকা এবং সহমর্মিতা প্রদর্শন করা।’’

উপাচার্য আরও উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ যদি এথিজম প্রচার করে বা ধর্মসম্মুখ আক্রমণ চালায়, তাহলে যুক্তি ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সেই বিরোধ মোকাবেলা করতে হবে। বর্তমান বিশ্ব শক্তির নয়, যুক্তির বিশ্ব।

এক পর্যায়ে আলোচনা সভায় অধ্যাপক ড. অরবিন্দ সাহা উপাচার্যের নিকট একটি স্থায়ী মন্দির নির্মাণের প্রস্তাব দেন, যা নিয়ে উপাচার্য ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

সদরূপ অনুষ্ঠান পালন করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সকল ধর্মের ঐক্য, সমৃদ্ধি এবং মানবিক বন্ধুত্বের বার্তা প্রদান করেছে।