ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হয়েছে। শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, যা দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতার নতুন এক অধ্যায় শুরু করবে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নেজমেদ্দিন বিলাল এরদোয়ান এই চুক্তিতে নিজেদের বক্তব্য ও স্বাক্ষর করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা অফিসের প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে দু’পক্ষের নেতৃত্বীয়রা আন্তরিক ও বন্ধুবৎসল পরিবেশে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন, যেখানে তারা ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার গুরুত্ব, সংস্কৃতি ও সভ্যতার সমৃদ্ধি এবং দেশীয় ক্রীড়া গুলোর প্রচারে পারস্পরিক সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে বিলাল এরদোয়ান বাংলাদেশের কাবাডি, কুস্তি, বলিখেলা ও নৌকা বাইচের মতো ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলোর বিশ্বব্যাপী প্রসারের বিষয়ে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনার কথাও জানান।
এরদোয়ান তার তুরস্কে শিক্ষামূলক কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, শিক্ষা বিনিময় প্রকল্প ও বিষয়ভিত্তিক প্রতিযোগিতার প্রস্তাব দেন। তিনি আরও জানান যে, তার সংস্থা বাংলাদেশে একটি বিদ্যালয় স্থাপনের আগ্রহ রাখে, যা শিক্ষার প্রসারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
পাশাপাশি, কক্সবাজারে তার মায়ের সঙ্গে করা সফরের স্মৃতিচারণে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা আয়োজনের পরিকল্পনায় সমর্থন জানান, যেখানে খেলাধুলার মাধ্যমে শরণার্থীদের মানসিক উন্নয়ন ও স্বস্তি নিশ্চিত করা হবে।
তুরস্কের বাংলাদেশের প্রতি অবিচল সমর্থনের কথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে তিনি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে তরুণ সমাজ ও সাধারণ জনগণের ভূমিকা প্রশংসা করেন এবং সাংস্কৃতিক ও জাতীয় পরিচয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক তার সাংস্কৃতিক মর্যাদা ও বৈশ্বিক অবস্থান পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে।
জওব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই গণঅভ্যুত্থানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তুরস্ককে দেশের বিশ্বাসযোগ্য মিত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইতিহাসের বিভিন্ন সংকটময় সময়ে তুরস্ক সর্বদা বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের জনগণের পাশে থেকেছে, যা আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।
উপদেষ্টা গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের নৈতিক অবস্থান ও বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিম জনগণের প্রতি তার সমর্থনকে শ্রদ্ধাসূচক প্রশংসা করেন। তিনি আন্তর্জতিকভাবে নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা জোর দেন এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন।
আসিফ মাহমুদ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো যেমন কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, বলিখেলা, কুস্তি ও নৌকা বাইচের আন্তর্জাতিকীকরণে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকের শেষে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নেজমেদ্দিন বিলাল এরদোয়ানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৫ সালের গ্লোবাল ইয়ুথ সামিটে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই সফর দুই দেশের যুব ও ক্রীড়াখাতসহ কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার ও গতিশীল করবে।