অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির (ওটিএ) প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং
লোভনীয় প্যাকেজ ও অধিক মূল্যছাড়ের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য ট্রাভেল এজেন্সি ও
সাধারণ যাত্রীদের সতর্ক করেছিল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ
(আটাব)। রবিবার (৩ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় আটাব।
বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্লাইট এক্সপার্ট নামের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অংশীদার এবং
সিইও সালমান বিন রশিদ শাহ সায়েম ২ আগস্ট হঠাৎ করে কার্যক্রম বন্ধ করে অফিস তালাবদ্ধ
রেখে ও ওয়েবসাইট অকার্যকর করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
২০১৬ সালে ফ্লাইট এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ২০১৭ সালে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি
হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি সাত-আট বছর ধরে অনলাইনে ট্রাভেল এজেন্সি
হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করছিল।
অতিরিক্ত কমিশন ও ছাড়ের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় অন্যান্য ওটিএ-র মতো তারাও জড়িয়ে পড়ে।
বাজারমূল্যের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা, কখনো এর চেয়েও বেশি ছাড় দিয়ে এয়ার
টিকিট বিক্রির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও গেমপ্লে করে আসছিল ওটিএগুলো।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ প্রায় ৫০
কোটি টাকা। এর বাইরেও তারা বড় বড় এজেন্সি থেকে টিকিট কিনে পুনরায় বিক্রি করত, যার
আর্থিক পরিমাণ নির্ভুলভাবে জানা যায়নি।
আটাব জানায়, বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর
প্রতারণা ও টিকিট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছে এবং সেক্টরে শৃঙ্খলা ও
স্বচ্ছতা আনতে গাইডলাইন প্রণয়নের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের
কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে।
২০২৩ সালের ২৭ জুলাই এবং ২০২৪ সালের ১০ জুলাই আটাব সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
করে, যা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকায় ছাপা হয়। সদস্যদের উদ্দেশে সার্কুলারও প্রদান
করা হয়। এছাড়া, ১৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ওটিএ নিয়ন্ত্রণে
সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আটাব।
ওটিএ কর্তৃক পোর্টাল আইডি শেয়ার করে অতিরিক্ত ছাড়ে টিকিট বিক্রির ফাঁদে ফেলে বাজার
দখল করা হয়। ডিপোজিট ও বিক্রয় বাড়ার পর তারা গ্রাহক ও এজেন্টদের টাকা নিয়ে গা-ঢাকা
দেয়।
এর আগেও ‘হালট্রিপ’, ‘২৪টিকিট ডটকম’ এবং ‘লেটস ফ্লাই’ নামের ওটিএগুলো একই কৌশলে
অর্থ আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে যায়।
আটাব জানায়, পোর্টাল আইডি শেয়ার ও অতিরিক্ত ছাড় বন্ধ না হলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের ঘটনা
ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন ধরে
গাইডলাইন তৈরির কাজ করলেও তা দ্রুত চূড়ান্ত করা জরুরি।
ফ্লাইট এক্সপার্টের প্রতারণার প্রেক্ষাপটে ৩ আগস্ট রোববার বিকাল ৪টায় আটাব প্রধান
কার্যালয়ে কার্যনির্বাহী পরিষদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ফ্লাইট এক্সপার্টকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও সদস্যপদ বাতিলের প্রক্রিয়া গ্রহণ,
ইস্যুকৃত টিকিটগুলোর রিফান্ড স্থগিত করতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ, ব্যাংকগুলো যেন
অতিরিক্ত ছাড়ে টিকিট বিক্রির অফার না দেয় সে বিষয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া, ভুক্তভোগী সদস্যদের প্রশাসনিক ও আইনগত সহায়তা দিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের
মাধ্যমে আটাব সহযোগিতা করবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আব্দুস সালাম আরেফ। উপস্থিত ছিলেন আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত
সালেহ, অর্থসচিব শফিক উল্লাহ নান্টু, উপমহাসচিব তোহা চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আতিকুর
রহমান, নির্বাহী সদস্য দিদারুল হক, সিনিয়র সদস্য ও সাবেক মহাসচিব জিন্নুর আহমেদ
চৌধুরী দীপুসহ অনেকে।
আটাব জানায়, দেশের পর্যটন ও বিমান চলাচল খাতকে রক্ষা করতে এ ধরনের প্রতারণামূলক
প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দ্রুত গাইডলাইন প্রণয়ন ও
বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।