ঢাকা | শুক্রবার | ১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

কমলনগরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি ঘর বিক্রির জল্পনা: লাখ টাকা দরে ক্রেতা-বিক্রেতার চাহিদা বেড়েই যাচ্ছে

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি ঘর এখন লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা মনে করছেন এটি যেন সরকারি ঘর বিক্রির এক ধরনের মহোৎসব। প্রশাসনের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে দালালের আধিপত্য বেড়েছে। নিজস্ব জমি ও বাড়ি থাকা সত্ত্বেও সচ্ছল অনেক মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়ে তা মোটা অঙ্কের টাকায় অন্যদের হস্তান্তর করছেন। এমনকি কিছু ঘর একাধিকবার বিক্রি হয়েছে, আবার কেউ কেউ ওই ঘর ভাড়া দিয়েও দিচ্ছেন।

সম্প্রতি চরকাদিরা ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করে এখানে বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলা হলে এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ৮৯টি ঘরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক বিক্রি হয়ে গেছে। এসব ঘর দালালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং বেশির ভাগ ঘর তালাবদ্ধ থাকে। দালালরা প্রয়োজনমত নাগরিকদের নিয়ে ধাপে ধাপে লাখ টাকায় এসব ঘর বিক্রি করছেন, এমন তথ্য সংবাদকর্মীদের কাছে জানানো হয়।

উপজেলার ভূমি অফিসের সূত্র জানায়, কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা, হাজিরহাট, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ, চরকালকিনি ও চরমার্টিন ইউনিয়নে পাঁচটি ধাপে মোট ৮২০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের জন্য এই প্রকল্পের আওতায় ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে ঘর বরাদ্দ পেতে গিয়ে অনেক সচ্ছল ব্যক্তিরা ঘুষ দিয়ে নিজের জমি-বাড়ি থাকা সত্ত্বেও বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। এর ফলে প্রকৃত গৃহহীনরা অনেক ক্ষেত্রেই ঘর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, গৃহহীনরা দালালের হাত থেকে বড় অঙ্কের টাকায় বা মাসিক ভাড়ায় এসব ঘর কিনেছেন। কেউ ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার স্ট্যাম্প চুক্তির মাধ্যমে ঘর ক্রয় করেছেন, কেউ আবার মাসে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বাস করছেন। বিষয়টি ক্রমবর্ধমান হওয়ায় প্রকৃত গৃহহীন পরিবারগুলো বঞ্চিত হচ্ছেন বলে স্থানীয়রা আশংকা প্রকাশ করেছেন।

চরকাদিরা ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা কয়েকজন ক্রেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে বলেন, এখানে প্রায় ৫০টি ঘর বিক্রির মাধ্যমে নতুন মালিকের কাছে গিয়েছে, আবার ১০টি ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে, যেগুলো দালালের কাছে রয়েছে। তাদের দাবি, উপজেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকায় ঘরের অবাধ বিক্রয় চলছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পরিতোষ কুমার বিশ্বাস বলেন, ঘর নির্মাণের দায়িত্ব তাদের হলেও ঘর বরাদ্দের তালিকা যাচাই-বাছাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ইউএনও এর মাধ্যমে করা হয়, যারা বিষয়টি সম্পর্কিত বিস্তারিত বলতে পারবেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মুহাম্মদ আরাফাত হোসেন জানান, অভিযোগ শুনে সংশ্লিষ্ট স্থান সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কমলনগর ইউএনও রাহাত উজ-জামানও বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব অভিযোগ সম্পর্কে অবগত আছেন এবং বলেন, অভিযোগ যাচাই-বৈচারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। স্থানীয় গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের জন্য নির্মিত সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘরগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হতে প্রশাসনের তদারকি আরও জোরদার করা প্রয়োজন।