লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য নির্মাণ করা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো লুকিয়ে দালালদের কন্ট্রোলে চলে গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সরকারি বরাদ্দ পাওয়া এই ঘরগুলো এখন লাখ টাকাসহ বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে। যেন সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, এক ধরনের ‘বিক্রির উৎসব’ চলছে।
কমলনগরের চরকাদিরা ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘেঁটে দেখা গেছে, এখানে একাধিক ঘর সদ্য ঘরভাড়া কিংবা বিক্রি হয়েছে অনেকবার। বেশ কিছু ঘর দালালরা নিজেরাই তালাবন্ধ করে রেখেছেন এবং ক্রেতা পেলেই ধাপে ধাপে লাখ টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। জানা গেছে, ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মোট ৮৯টি ঘরের মধ্যে প্রায় ৫০টি ঘর বিক্রি হয়ে গিয়েছে, যেটিতে বসবাস করছেন ক্রেতারা, আবার কেউ ভাড়া নিয়েও বসবাস করছেন।
উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় চরকাদিরা, হাজিরহাট, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ, চরকালকিনি ও চরমার্টিন ইউনিয়নে পাঁচটি ধাপে মোট ৮২০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ঘর বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে অনেক সচ্ছল ব্যক্তিরা নিজেদের জমি-বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ঘুষ দিয়ে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন, অন্যদিকে প্রকৃত গৃহহীনরা ঘর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ফলে, গৃহহীনরা দালালদের কাছে থেকে ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দিতেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কিনছেন এবং মাসে ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা ভাড়া দিতেও বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয়রা মনে করছেন, ঘর বরাদ্দের সময় যথাযথ যাচাই-বাছাই এবং দুর্নীতি রোধ করা হলে প্রকৃত সুবিধাভোগীরাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে উঠতে পারতেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পরিতোষ কুমার বিশ্বাস উল্লেখ করেন, ঘর নির্মাণ তাঁদের দায়িত্ব হলেও বরাদ্দের তালিকা যাচাই-বাছাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউএনও কর্তৃক করা হয়েছে, তাই এই বিষয়গুলো তারা ভালো বলতে পারবেন।
অপরদিকে, ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ আরাফাত হোসেন জানিয়েছেন, দ্রুত সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমলনগরের ইউএনও রাহাত উজ-জামানও জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এই দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং সুবিধাভোগীর পরিবর্তে দালাল ও অন্য অনিয়মীরা লাভবান হচ্ছেন, যা প্রশাসনের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।