ঢাকা | বৃহস্পতিবার | ১৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

কমলনগরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির বেনজির পরিস্থিতি: লাখ টাকায় বিক্রি যাচ্ছে ঘর

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর আদৌ সরকারি সাহায্যের জন্য যারা সত্যিকার মানুষ দরকার তাদের দিতে গিয়ে বিপরীতহারে দালালদের দখলে চলে গেছে। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো এখন লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে নানা অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের তীক্ষ্ণ নজরদারির অভাবে এখানে যেন ঘর বিক্রির এক মহোৎসব চলছে।

যেসব পরিবারের নিজেদের জমি বা বাড়ি রয়েছে, তারাও ঘর পাওয়ার জন্য দালালদের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে ঘর বরাদ্দ নিচ্ছেন। পরে তারা এই ঘরগুলো অন্যদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করছেন। এমনকি, একই ঘর একাধিকবার বিক্রি হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কেউ কেউ আবার ভাড়া দিয়ে ঘর ব্যবহার করাচ্ছেন।

বিশেষ করে চরকাদিরা ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় এই অবস্থা স্পষ্ট। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, একটি চিহ্নিত দালাল এখানকার ঘরের ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন। তার কাছে এখনও প্রায় দশটি ঘর তালা মেরে রাখা রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তিনি ধাপে ধাপে লাখের বেশি দামে এসব ঘর বিক্রি করছেন।

উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় চরকাদিরা, হাজিরহাট, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ, চরকালকিনি ও চরমার্টিন ইউনিয়নে পাঁচ ধাপে মোট ৮২০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য এসব ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলেও যাচাই-বাছাইয়ে অনিয়মের কারণে অনেক সচ্ছল ব্যক্তিরাও ঘর পেয়ে যাচ্ছেন, যাদের নিজেদের জমি-বাড়ি রয়েছে।

এর ফলে প্রকৃত গৃহহীনরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা বাধ্য হয়ে দালালদের হাত থেকে ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় ঘর কিনে নিতে বা মাসে আট থেকে দশ শত টাকায় ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, এখানে এখনো বেশ কিছু ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে এবং দালালরা এসব ঘর টাকার দরকারে ধাপে ধাপে বিক্রি করে যাচ্ছেন। প্রশাসনের তৎপরতা ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পরিতোষ কুমার বিশ্বাস জানান, ঘর নির্মাণের দায়িত্ব তাদের হলে ও বরাদ্দের তালিকা যাচাই-বাছাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউএনও করেন, তাই বিষয়টি তারা ভালো বলতে পারবেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মুহাম্মদ আরাফাত হোসেন জানিয়েছেন, দ্রুত সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ইউএনও রাহাত উজ-জামানও অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

গৃহহীনদের জন্য সরকারি সাহায্য হিসেবে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি ও অবৈধ দখলের এই অভিযোগগুলো প্রশাসনের তৎপরতা ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে দ্রুত বন্ধ করতে হবে, যাতে প্রকৃত সহযোগিতা পায় প্রকৃত পক্ষে গৃহহীন ও দুস্থ মানুষরা।