ঢাকা | রবিবার | ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

কুড়িগ্রামে পানি কমলেও তিস্তা পাড়ের ভাঙন আতঙ্ক কাটছে না

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ-নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে পানির মাত্রা কমতে শুরু করেছে। এতে নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন। বিশেষ করে দুধকুমার নদীর পানি শুক্রবার হঠাৎ করেই ১৬ সেন্টিমিটার ধরে কমে গিয়েছে, যা বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদীর পানি কমতে থাকায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

তবে পানি কমার পরেও তিস্তা নদীর অববাহিকায় কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন এবং উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নে নদীর তীব্র ভাঙন চলছে। বিশেষ করে বজরা ইউনিয়নের কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হওয়ায় স্থানীয়রা their their বাড়িঘর ছেড়ে সড়াতে শুরু করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরু করেছে।

বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাইয়ুম সর্দার জানিয়েছেন, ভাঙন প্রতিরোধের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে, কিন্তু পানিস্তরের বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। গত সপ্তাহে এখানে ৬টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে, আর ১০টি বাড়িসহ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামের অনেক পরিবার নদীর বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছেন।

সাতালষ্কার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আনোয়ারা বলেন, ‘‘গতকাল যে রাস্তা দিয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম, আজ সেই রাস্তা নদীগর্ভে চলে গেছে। যে কোনো সময় দুইটি স্কুলও নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে।’’ সাধুয়াদামারহাট গ্রামের ফুলবাবু জানিয়েছেন, ‘‘নদী আমার দুই বিঘা জমি হাত سے নিয়ে নিয়েছে। আমার মতো আরও অনেকে বসতবাড়ি হারিয়েছেন। সরকারিভাবে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।’’

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহা বলেছেন, ‘‘আমি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং জনপ্রতিনিধিদের তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের কাছে ৩২০টি শুকনো খাদ্য প্যাকেট রয়েছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তা সরবরাহ করা হবে।’’

অপর দিকে দুধকুমার নদীর পানিবৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলে জলের প্রবেশ শুরু হলেও শুক্রকারী দিন থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। দুধকুমার নদীর পানি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার তা কমে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে।

তবে কিছু এলাকায় এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের কাস ইউনিয়নের ফান্দের চরে এবং বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের কুটি বামনডাঙ্গা চরে নীচু এলাকায় ৪ থেকে ৫টি বাড়িতে পানি উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, এই এলাকা জলাবদ্ধতায় ভুগছে। নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহমেদ জানিয়েছেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছি। এখন পর্যন্ত বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কিছু নিচু বাড়ি জলাবদ্ধ রয়েছে। সেসব ক্ষেত্রে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ও নদী ভাঙন নিয়ন্ত্রণে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন সরকার জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের কাছে প্রস্তুত রয়েছে ২ হাজার ৫শ’ শুকনো খাবার প্যাকেট এবং ৪৪০ মেট্রিক টন জি আর চাল। নগদ তহবিলও রয়েছে ১৪ লাখ টাকা। তালিকা পেলেই দ্রুত এসব সরবরাহ করা হবে। প্রত্যেক উপজেলায় ৩২০ প্যাকেট শুকনো খাবার ইতোমধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।’’

বর্তমানে পানি কমা সত্ত্বেও নদী ভাঙন ও বন্যার প্রভাব কুড়িগ্রামের মানুষকে এখনও অস্থির করে রেখেছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।