কুড়িগ্রামে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে ১৬টি নদী-নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর শুক্রবার থেকে তা কমতে শুরু করেছে। এই কারণে নিম্নাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। বিশেষ করে দুধকুমার নদীর পানি শুক্রবার ১৬ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদীর পানি ধীরে ধীরে কমছে।
তবে পানি কমলেও তিস্তা নদীর অববাহিকায় রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার চার ইউনিয়নে শতাধিক পরিবার এখনো ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে বজরা ইউনিয়নের কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামে তীব্র ভাঙন শুরু হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাইয়ুম সর্দার জানিয়েছেন, ঠিকাদার নিয়োগ করলেও অতিরিক্ত পানিবৃদ্ধির কারণে কাজ শুরু করতে পারেনি। এর ফলে চলতি সপ্তাহেই নদীগর্ভে গেছে ছয়টি বাড়ি, সঙ্গে রয়েছে একটি বিদ্যালয়ও। কালপানি বজরা ও সাধুয়াদামারহাট গ্রামে স্থানীয়দের বাড়ি নদীতে হারিয়ে গেছে।
সাতালষ্কার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ারা জানিয়েছেন, গতকাল পর্যন্ত যেখান দিয়ে স্কুলে যেতেন, আজ সেই রাস্তা নদীগর্ভে চলে গেছে। পরিস্থিতি এমন যে, যে কোনো সময় দুটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।
সাধুয়াদামারহাট গ্রামের ফুলবাবু জানান, তার দুই বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে, সঙ্গে অনেকের বসতবাড়ি হারিয়েছে। তিনি সরকার থেকে ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহা জানিয়েছেন, তারা ভাঙন কবলিত এলাকায় পরিদর্শন করেছেন ও জনপ্রতিনিধিদের তালিকা প্রস্তুত করতে বলেছেন। ত্রাণ হিসেবে ৩২০ প্যাকেট শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং জিআর চালের চাহিদাও প্রদান করা হয়েছে।
দুধকুমার নদীতে পানিবৃদ্ধির ফলে কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করলেও শুক্রবার থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। নাগেশ্বরী উপজেলার কিছু নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতা এখনো রয়েছে। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী বল্লভের কাস ইউনিয়নের ফান্দের চরে এবং বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের নীচু কিছু বাড়িতে পানি উঠে গেছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহমেদ জানিয়েছেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এখন পর্যন্ত বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে নীচু এলাকায় কিছু বাড়ি এখনো জলাবদ্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছেন তারা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন সরকার জানিয়েছেন, তারা ২ হাজার ৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৪৪০ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং নগদ ১৪ লাখ টাকা ত্রাণ তহবিল মজু্য রেখেছেন। তালিকা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে এসব ত্রাণ উপজেলার মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হবে এবং প্রতিটি উপজেলায় ৩২০ প্যাকেট শুকনো খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা আছে।
কুড়িগ্রামে নদীর পানি কমার মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ভাঙন ও বন্যার প্রকৃতির কারণে মানুষ এখনও বড়সড় ঝুঁকির মুখে রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।