ঢাকা | রবিবার | ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

কেটি বোল্টারের ম্যাচ নয়, যেন কোর্টে লড়াই মৃত্যুর সঙ্গে

গেল মাসে অনুষ্ঠিত ফ্রেঞ্চ ওপেনের নারী এককের প্রথম রাউন্ডে ব্রিটিশ টেনিস তারকা কেটি বোল্টার একটি কঠিন লড়াইয়ে স্বাগতিক তারকার বিরুদ্ধে জয় অর্জন করেন। প্রথম সেটে টাইব্রেকারে পরাজয়ের পর তিনি পরবর্তী দুই সেটে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ফিরে আসেন এবং ৬-৭, ৬-১, ৬-১ স্কোরে জয় লাভ করেন। এটি ছিল তার রোলাঁ গারোসের মূল পর্বে প্রথম জয়। এই সাফল্য তার জন্য আনন্দের হলেও, একই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে অসংখ্য হুমকির মুখে পড়তে হয় তাকে।

ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন মাধ্যমের ইনবক্সে কেটে বোল্টারকে দেওয়া হুমকির মেসেজগুলো ভয়াবহ ছিল, যেমন ‘আশা করি তুমি ক্যানসারে মারা যাও’, ‘তোমার দাদির কবর আমি খুঁড়ে ফেলব যদি তুমি না মরো’, ‘তোমার কারণে আমার মায়ের পাঠানো টাকা উড়েছে, তুমি মরে যাও’। এসব মেসেজ তাকে মানসিকভাবে ভীষণভাবে কষ্ট দেয়। নিজের ভাষায়, ‘‘এখন এসব বার্তা আমার জন্য অনেকটাই স্বাভাবিক, যেন এসব আমার দৈনন্দিন রুটিনের অংশ।’’

বিবিসি স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বোল্টার জানান, প্রথমে এসব বার্তাকে তিনি অত্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে নিতেন এবং মানসিক চাপ ও বিষণ্নতায় ভুগতেন, কখনও কখনও কান্নাও করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একে একে এসব বার্তা তার জন্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এরা কারা? কীভাবে একজন মানুষকে ঘৃণার এত বড় ভাগ্য তৈরি হয়?’’

তবে বোল্টার মনে করেন এর পেছনে জুয়ার সংযোগ রয়েছে। যারা খেলায় পয়সা হারায়, তারা অনেক সময় খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে রাগ ঝাড়ে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালেই টেনিস খেলোয়াড়েরা অন্তত ৮ হাজার হুমকিমূলক বার্তা পেয়েছেন, যার প্রায় ৪০ শতাংশ এসেছে রাগান্বিত জুয়াড়িদের পক্ষ থেকে। একমাত্র একজন থেকে ২৬৩টি হুমকিমূলক বার্তা পাঠানো হয়েছে। এসব তথ্য গত কয়েক মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেয়া হয়েছে, এবং এর মতো হাজার হাজার হিসেব রয়েছে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল, সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কোনো প্রভাবশালী পদক্ষেপ দেখা যায় না। ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা এখনও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। বোল্টার জানাচ্ছেন, তার স্প্যামবক্সে প্রতিদিনই অশ্লীল ছবি পাঠানো হয়। তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য মানসিকভাবে এসব মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বার বার অপমানের মুখোমুখি বোল্টার মাঝে মাঝে নম্রতার সঙ্গেই জবাব দেন, আর অনেক সময় অপমানকারীরা আসলে তার বড় ভক্তও হয়ে থাকেন। বোল্টারের বাগদত্তো অস্ট্রেলিয়ার টেনিস তারকা অ্যালেক্স ডি মিনরও হুমকির শিকার হয়েছেন তার হবু স্ত্রীর কারণে। এমনকি ডি মিনরের বিরুদ্ধে আসা হুমকি বার্তা কেটির ইনবক্সেও এসেছে। যেন দুই খেলোয়াড় একই ময়দানে খেলছেন, অথচ একপাশে টেনিস, অন্যপাশে ট্রল ও হুমকি।

আসন্ন উইম্বলডনকে সামনে রেখে বোল্টার শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তবে বাড়ছে সামাজিক মাধ্যমে হুমকি ও আক্রমণের চাপ। শুধুমাত্র বোল্টার ও ডি মিনর নয়, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নারী টেনিস তারকা ইগা শিয়নটেক, জেসিকা পেগুলা, ওন্স জাবের, আরিনা সাবালেস্কাদের মতো নামগুলোও নিয়মিত সাইবার সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা বেশি দেখা যায়। এই পরিস্থিতি টেনিস বিশ্বে বড় একটি সমস্যায় পরিণত হচ্ছে যা অবিলম্বে সামাজিক মাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর মনোযোগ ও পদক্ষেপের দাবি রাখে।