কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব এখনও বুকে মেপে রাখছেন নড়াইল সদর হাসপাতালের রোগী, সেবিকা ও চিকিৎসকরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের বাঁচাতে যখন প্রয়োজন ছিল, তখন প্রতিটি ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছিল প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে। তবে ইতিমধ্যেই নানা অভিযোগ উঠে এসেছে যে, শুরু থেকেই এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি, ফলে অক্সিজেনের জন্য রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এবং হাসপাতালের সেবিকা ও চিকিৎসকরা বেছে চলেছেন এক দীর্ঘ প্রতিকূলতা।
সরেজমিন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ এর শুরুতে ভারী শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য উপসর্গে আক্রান্ত রোগীরা জেলা সদরের একমাত্র আধুনিকায়িত হাসপাতালে আশ্রয় নেন। হাসপাতালের ১৭৩টি স্থানে অক্সিজেন সরবরাহ পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কোন পয়েন্ট থেকে সে সময় অক্সিজেন সরবরাহ কার্যকর হয়নি। এই মুহূর্তে হাত থেকে সিলিন্ডার অক্সিজেনযোগে স্বাস্থ্যসেবা চালু রয়েছে, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের ক্ষোভের কারণ। সেবিকা ও চিকিৎসকরা প্রতিদিন অক্সিজেন সরবরাহের সংকট মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছেন। সিলিন্ডার শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ও তা পুনরায় ভরাটের ঝামেলা তাদেরকে অতিরিক্ত চাপের মুখোমুখি করছে।
রোগীর স্বজনরা অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার অকার্যকারিতার কারণে হাসপাতালের বেডেই রোগী মারা যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন এবং প্রায় সময় তর্কাতর্কিতেও জড়াতে হয়। একাধিক সেবিকা জানান, সিলিন্ডারের অবস্থা নিরীক্ষণের কোন স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণেও সমস্যা বাড়ছে। মিটার নষ্টের কারণে অক্সিজেনের সঠিক পরিমাণ নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা। এমন পরিস্থিতিতে, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়ায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে সেবা প্রদানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আলিমুজ্জামান সেতু বলেন, শিশুরা অক্সিজেনের অভাবে বিশেষ কষ্ট পাচ্ছে এবং এর ফলে কিছু শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যদি কোভিড সংক্রমণ বাড়ে তাহলে অবস্থার অবনতি ভয়ানক রকমেই বাড়বে।
২০২১ সালের জুনে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে হাসপাতালের জন্য ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ লিটারের একটি হাইফ্লো অক্সিজেন ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কয়েক মাস চলার পর থেকে এই কেন্দ্রীয় সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে ট্যাঙ্কটি হাসপাতালের পেছনের একটি ঝোপঝাড়ে পড়ে রয়েছে, আর ভিতরে সঞ্চালন লাইনের সকেটগুলো মরিচা ধরে ভেঙে গেছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল গাফফার জানালেন, তার দায়িত্বগ্রহণের পর দুইবার ট্যাঙ্কে অক্সিজেন ভর্তি করা হয়েছে, কিন্তু লিকেজ বা অন্য যেকোনো কারণে তা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কোম্পানীকে জানানো হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো মেরামত হয়নি। তাই তারা বাধ্য হয়ে বোতল অক্সিজেনের মাধ্যমে সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, মন্ত্রণালয় ও কোম্পানির কাছে এই সমস্যার কথা জানিয়েও এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
সুতরাং, নড়াইল সদর হাসপাতালের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কার না হলে চিকিৎসা সেবায় বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে, যা রোগী ও তাদের পরিবারের জন্য অতিরিক্ত শোকের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া।