জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে একটি পুকুরে মাছ পালনকালে অস্বাস্থ্যকর মরা মুরগির বাচ্চা এবং পঁচা ডিম ব্যবহার করা হচ্ছে মাছের খাবার হিসেবে। মাছকে সস্তা খাবার সরবরাহের জন্য এ ধরনের উপাদান ব্যবহারকালে পুকুরের আশপাশের পরিবেশ দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে, যা স্থানীয় গ্রামবাসীদের জন্য দিনের পর দিন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ এই ধরনের কার্যক্রমকে মানবদেহের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার পশ্চিম দূর্গাপুর গ্রামের এমদাদুল হক একাধিক জাতের মাছের চাষ করেন। তার ছেলে আবু সালেক পুকুরটির পরিচালনা করছেন। মাছের সাধারণ খাবারের পরিবর্তে পুকুরে নিয়মিত খাওয়ানো হচ্ছে জীবন্ত ও মরা মুরগির বাচ্চা এবং নষ্ট পঁচা ডিম, যা জেলা ও আশপাশ থেকে সংগ্রহ করে পুকুরের পাড়ে এনে ব্রেন্ডার মেশিনে সেদ্ধ করা হয়। এতে পুকুরের আশপাশে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিবেশ দূষিত হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এ বিষয়ে পুকুর মালিককে বারবার সতর্ক করলেও তার কোনো পদক্ষেপ নেই; উল্টো তারা নানা ভয়-ভীতি ও হুমকির মুখে পড়েছেন। পুকুরের কিছু কর্মচারী এই অভিযোগ স্বীকার করলেও মালিক তা অস্বীকার করছেন।
পশ্চিম দূর্গাপুর গ্রামের মোহন কুমার বলেন, “হ্যাচারী থেকে নষ্ট ও পঁচা ডিম এনে মাছকে খাওয়ানো হয়। এর ফলে পুকুরের পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে, গোসলও করা সম্ভব নয় এবং প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়ায়। নিষেধ করলেও তারা হুমকি দেয়।”
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, “পঁচা ডিম ও মুরগির বাচ্চা পুকুর পাড়ে রেখে দুর্গন্ধ ছড়ানো হয়। যখন এগুলো আগুনে জ্বালানো হয়, তখনও প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়ায়, যা এখানে বসবাসের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। আমরা অনেকবার এ কার্যক্রম বন্ধ করার অনুরোধ করেছি, কিন্তু তারা কোনো কথা শোনে না।”
রিফাত ইসলাম আরো জানান, “আমরা প্রতিদিন এই দুর্গন্ধে ভোগান্তিতে পড়ছি। পরিবেশ দূষণের এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাচ্ছি। কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।”
পুকুরের কর্মচারী বিশ্বনাথ চন্দ্র জানিয়েছেন, “আমরা জামালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার হ্যাচারী থেকে পঁচা ডিম ও জীবন্ত মুরগির বাচ্চা আনি। সেগুলো ব্রেন্ডার মেশিনে সেদ্ধ করে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করি।”
অন্যদিকে, পুকুরের মালিক আবু সালেক দাবি করেছেন, “আমি মাছ চাষের কাজ পরিচালনা করি। এখানে বিভিন্ন জাতের মাছ যেমন রুই, কাতলা, পাঙাস পালন করি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
জয়পুরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আল মামুন বলেন, “আমাদের খাদ্যতালিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ মাছ। যদি মাছকে অস্বাস্থ্যকর খাবার দেয়া হয়, তাহলে মাছের মাধ্যমে বিভিন্ন জীবাণু ও বিষাক্ত উপাদান মানবদেহে প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। এছাড়াও দুর্গন্ধের কারণে মানুষের নানা রোগের সৃষ্টি হতে পারে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, “পরিবেশ দূষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জয়পুরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, “মাছ চাষের ক্ষেত্রে যদি কেউ সরকারি বিধি-নিষেধ না মেনে অপদ্রব্য ব্যবহার করেন, তাহলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা আট লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”