কেশবপুরের ঐতিহ্যবাহী কালোমুখো হনুমানরা খাদ্যের তীব্র সংকট ও বন উজাড়ের কারণে নিজেদের স্বাভাবিক আবাসস্থল ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। প্রয়োজনীয় খাদ্য না পাওয়ায় কিছু হনুমানও মারা যাচ্ছে। এই সংকটের মোকাবেলায় কালোমুখো হনুমানদের রক্ষার দাবি উঠেছে সমাজের বিভিন্ন মহলে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুর অঞ্চলে কালোমুখো হনুমানের একটি বিশাল অভয়ারণ্য ছিল। তবে বন উজাড় এবং খাদ্যের অভাবের কারণে ধীরে ধীরে হনুমানদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। স্থানীয় বন বিভাগ জানিয়েছে, বর্তমানে কেশবপুরে কালোমুখো হনুমানের সংখ্যা প্রায় ১৮০ থেকে ২০০টির মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা ৪-৫ বছর আগে ছিল প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০টি।
সূত্র থেকে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে যশোরের কেশবপুরে বসবাস করতেন এবং তাঁদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমানও কেশবপুরে আনা হয়েছিল। সেই থেকে স্থানীয় হনুমানদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। কালের বিবর্তনে বর্তমানে সেই হনুমানরা বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল, যা হনুমানদের প্রধান খাদ্য ও আশ্রয়ের উৎস ছিল। বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে জীবন ধারণ করত তারা।
কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বনাঞ্চল কমে গেছে, অবৈধ ইটভাটাসহ নানা কারণে বনভূমি ধ্বংসের শিকার হচ্ছে। একই সঙ্গে পল্লীবিদ্যুতের তারের সাথে হনুমানদের সংস্পর্শে পড়ে কয়েকটি বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনা ঘটেছে, যা অনেক হনুমানের মৃত্যু ঘটিয়েছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমানরা আশ্রয় খুঁজতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।
কেশবপুর উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন জানান, বনজঙ্গল সংকোচনের কারণে হনুমানদের খাদ্যাধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের রক্ষার জন্য সরকারিভাবেই খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন জানান, বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগেও হনুমানদের খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে তারা গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে বেশি বিচরণ করছে, যেখানে খাদ্যের ব্যবস্থা কিছুটা সহজ। তবে তাদের নিরাপদ ও প্রাকৃতিক আবাস পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।