রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার বহুতল মার্কেট নির্মাণ কার্যক্রমে ড্রইং, ডিজাইন ও পাইলিং সহ যাবতীয় কাজেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কার্যাদেশ দেওয়ার পর প্রায় ১০ মাস পার হলেও প্রকৃত নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি, অথচ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রায় এক কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন আই.ইউ.জি.আই.পি প্রকল্পের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে গোয়ালন্দ পৌরসভায় ৭ তলা (ভূমি সহ ৩ তলা) মার্কেট নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি পরীক্ষা, স্থান নির্বাচন, ড্রইং ও ডিজাইন সম্পন্ন হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। ফরিদপুরের তাশা কনস্ট্রাকশন লিঃ ও জান্নাত কনস্ট্রাকশনের যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ কাজ হাতে নেওয়া হলেও প্রধান ভবনের নির্মাণ এখনও শুরু হয়নি।
গত ৫ আগস্ট সংবাদকর্মীরা সরেজমিনে নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করার সময় তারা দেখতে পান এলাকার চারপাশ টিনের বেড়ায় ঘেরা এবং পিকাস্ট পাইলিং কাজ চলছে। নির্মাণে নিয়োজিত প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, ৫০ ফুট দীর্ঘ পাইল স্থাপনের বদলে ২৫ ফুট লম্বা মাত্র ২১টি পাইলিং স্থাপন করা হয়েছে। মাটির কঠোরতার কারণে তাদের মতে এতটুকু যথেষ্ট। তবে বাজার এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, ৫০ ফুটের জায়গায় মাত্র ২৫ ফুট পাইল দেওয়ার কারণে নির্মাণ সামগ্রীর মানহীনতা এবং পাইল ভেঙ্গে পড়ার ঘটনা ঘটছে।
আরেকটি সংকট হলো পাইলের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হলেও দৈর্ঘ্য কমানো হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কিংবা পৌর কর্তৃপক্ষ এই পরিবর্তনের কোনো লিখিত নির্দেশ প্রতিবেদন কিংবা সিডিউলে দেখাতে পারেনি।
১২ আগস্ট গোয়ালন্দ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ফেরদৌস খান বলেন, মাটির বিয়ারিং ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাইলের দৈর্ঘ্য ও সংখ্যা পরিবর্তন করা হয়েছে। নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণ হিসেবে পুরাতন দোকান অপসারণে বিলম্বকে বোঝানো হচ্ছে। তবে কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে না, বলে তিনি সময় বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা জানান।
নির্বাহী প্রকৌশলী এসব কাজের অগ্রগতি অনুসারে প্রায় এক কোটি টাকার বিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে পরিশোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন। পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাহিদুর রহমান এই বিল প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তবে কাজের গুণগত মান ও কারিগরি বিষয় সংক্রান্ত বক্তব্য এড়িয়ে চলেছেন।
এদিকে তাশা কনস্ট্রাকশন লিঃ ও জান্নাত কনস্ট্রাকশনের মালিক শহীদুল ইসলাম দাবি করেছেন, প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে তারা স্থানীয় ঠিকাদারদের নিয়োজিত রেখেছেন এবং সমস্যার অবকাশ নেই। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিষয়টি বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সার্বিকভাবে গোয়ালন্দ পৌরসভার বহুতল মার্কেট নির্মাণে প্রকৌশলগত ত্রুটিসহ সময়ানুকূলে কাজ না হাওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসায় এই প্রকল্পের প্রতি মানুষের বিশেষ উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।