ঢাকা | শনিবার | ১৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল পৌঁছাবে মাত্র ১২ ঘণ্টায়, সাশ্রয় বছরে ২৫০ কোটি টাকা

দেশের জ্বালানি পরিবহণ খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। এই প্রথম চট্টগ্রাম থেকে

ঢাকায় সরাসরি পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পাঠানোর প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে

পরীক্ষামূলকভাবে তেল সরবরাহকালে জিরো সিস্টেম লস অর্জিত হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি

হয়েছে। 

সফল প্রাক-কমিশনিংয়ের পর শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার গুপ্তাখালে

পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডেসপাস টার্মিনালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন বিদ্যুৎ,

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেল পরিবহণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)

বার্ষিক খরচ হয় প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা। একই পরিমাণ তেল পাইপলাইনে সরবরাহ করতে খরচ হবে

কেবল ৯০ কোটি টাকা। এই হিসাবে বছরে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া সিস্টেম

লস এবং চুরি ঠেকানোর মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তবে কর্মকর্তা বলছেন বছরে

সাশ্রয়ের পরিমাণ বেড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকায় দাড়াবে।

বিপিসির বাস্তবায়নে এবং সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের

নির্মাণে ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, কুমিল্লা,

চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। পাইপলাইনটি ২২টি নদী ও খাল

অতিক্রম করেছে এবং এর সঙ্গে নয়টি স্টেশন ও আধুনিক ডিপো নির্মিত হয়েছে। 

সূত্র জানায়, শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকে এই পাইপলাইন ব্যবহার করে

তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে

চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার বরুড়া হয়ে জ্বালানি তেল যাবে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল এবং

ঢাকার ফতুল্লায়। 

কুমিল্লার বরুড়ায় স্থাপন করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ অটোমেটেড ডিপো। এই

ডিপো থেকে চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সন্নিহিত অঞ্চলের প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল

সরবরাহ করা হবে। যা এখন নৌপথে চাঁদপুরে পাঠানো হয়ে থাকে। 

এই ডিপোতে জ্বালানি তেল গ্রহণ এবং সরবরাহ সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হবে সর্বাধুনিক

প্রযুক্তিতে। তেলের ওজন, তাপমাত্রা, সরবরাহ সবই পরিচালিত হবে কম্পিউটারাইজড

প্রযুক্তিতে।

পড়ুন: চাঁপাইয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে এলো ১০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ

২০১৮ সালে ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকায় অনুমোদিত এ প্রকল্প করোনা পরিস্থিতিতে বিলম্বিত

হয়ে চলতি বছরের মার্চে শেষ হয়েছে, বাড়তি খরচ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, দেশের চাহিদার ৭০ লাখ টন

জ্বালানির অন্তত ৩০ লাখ টন ব্যবহৃত হয় ঢাকা ও কুমিল্লা অঞ্চলে। এসব জ্বালানির বেশির

ভাগ বেসরকারি অয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমে নৌপথে পরিবাহিত হয়। এতে কোটি কোটি টাকার তেল

চুরিসহ নানা ধরনের অনিয়ম ঘটে। ট্যাংকারে জ্বালানি তেল পরিবহণের ক্ষেত্রে শূন্য

দশমিক ১৭ শতাংশ সিস্টেম লস বিপিসি মেনে নেয়। বছর শেষে এটা বিশাল অঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়।

সিস্টেম লস কিংবা তেল চুরির এই লোকসান থেকে জ্বালানি তেল সেক্টরকে বাঁচাতেই মূলত

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়।

পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ মেট্রিকটন এবং বছরে সর্বোচ্চ ৫ মিলিয়ন

মেট্রিকটন তেল পরিবহন সম্ভব হবে। আগে নৌপথে ট্যাংকারে নিতে লাগতো ৪৮ ঘণ্টা, এখন

লাগবে মাত্র ১২ ঘণ্টা। ফলে বিপিসির বার্ষিক পরিবহণ খরচ ৩২৬ কোটি টাকা থেকে নেমে

আসবে মাত্র ৯০ কোটি টাকায়—সাশ্রয় হবে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা। পাশাপাশি সিস্টেম লস ও

চুরি প্রায় শূন্যে নেমে আসবে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, যেখান থেকে পুরো পরিবহণ প্রক্রিয়া

ও নিরাপত্তা ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং হবে। 

প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক ইউএনবিকে জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে পাঁচ

কোটি লিটার ডিজেল কোনো ক্ষতি ছাড়াই পরিবহণ সফল হয়েছে। তিনি বলেন, এখন রিজার্ভার

থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিপোতে দ্রুত ও নিরাপদে তেল পৌঁছে দেওয়া যাবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং

সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ হাসান উজ-জামান।