চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ হামলা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি বিবরণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে, যাতে সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, বিস্ফোরক, অস্ত্র বহন ও একত্রে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নির্দেশনা রাত ১২টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
সংঘর্ষের সূচনাটি ঘটে গত শনিবার রাতের দিকে, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী দারোয়ানের সঙ্গে বাচ্ছায় আপত্তি করায় মারধর ও অপমানের শিকার হন। সেই সময় স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও সংঘর্ষ বেঁধে যায়। স্থানীয়রা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা চালায়। এতে অন্তত ৭০ জন শিক্ষার্থী আহত হন,যার মধ্যে ২৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতের এই অগ্নিযুগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নেয়, একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রোববার সকালে পুনরায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হলে দ্বিতীয় দফার সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়, এতে আরও ৭০-৮০ জন আহত হন। উপউপাচার্য ও প্রাধ্যক্ষ সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। অভিযোগ আসছে, এই হামলার পেছনে স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হানিফ গং জড়িত, যারা অস্ত্র ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাঁদের লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানো এবং ক্ষমতা দেখানোর জন্য এই হামলা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের মুখোমুখি হওয়া উপ-উপাচার্য ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ছাত্র-শিক্ষকদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। বেশিরভাগকেই দা, কুড়াল ও ছুরির আঘাতে আহত করেছে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী এসআই বেলায়েত হোসেন জানান, বিকেল ৪টার পর থেকে হাসপাতালে আনা হয়েছে ৫১ জন আহত শিক্ষার্থী। তাদের শরীরে চোখে, শরীর ও মাথায় জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। আহতদের মধ্যে দা ও ছুরির আঘাতে দুই ছাত্র ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিপ্রেক্ষিতে, আহত ছাত্রদের কারণে রোববারের সব পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। উপ-উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, আহত শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। ঘটনা তদন্তে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি তাঁর বহিষ্কার ঘোষণা করেছে। রোববার বিকালে দলের শীর্ষ নেতারা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, তিনি দলের নির্দেশ অমান্য করে ছাত্রদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
এছাড়াও, সংঘর্ষের জেরে ব্যাপক তদন্ত ও দোষীদের শনাক্তের জন্য দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও অন্য সংগঠনগুলো, ষড়যন্ত্রের অধ্যায়ে জড়িতিদের দ্রুত গ্রেপ্তার অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। সংগঠনের নেতারা বলছেন, এই জটিল পরিস্থিতি দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই যেন দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করেন।