চট্টগ্রামের বায়েজিদ বেস্তামী থানার চৌধুরীনগর আবাসিক এলাকার বহু মানুষের জীবনে যেন এক মরমর এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে চৌধুরীনগর বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অবৈধ কর্মকাণ্ড। এই সমিতি দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে স্থানীয় মানুষের নিজস্ব সম্পত্তি থেকে শত কোটি টাকার জমি ও অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) লে-আউটভুক্ত রাস্তা, গ্রিন জোন, ইদগাঁ, স্কুলের মাঠ এমনকি মসজিদের জায়গাও তাদের অবৈধ দখলে রয়েছে। আইনগতভাবে বিক্রয়ের জন্য সাব-কবলা দলিল আবশ্যক হলেও এতে ঘাটতিতে, সমিতির প্রকাশিত পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ফরমালিটি বিহীন হস্তান্তর চলছে। এই ‘মগের মুল্লুক’ কার্যক্রমে সমিতির সভাপতি ও সাংস্থানিক নেতৃবৃন্দের সংযোগে চট্টগ্রাম সমবায় অফিসের একাধিক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাও সহযোদ্ধা। বার্ষিক অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক ভুয়া ভাউচারে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন আর জমির নামজারি ও পানির লাইনের সংযোগের জন্য ঘুষ বাবদ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, কিন্তু এখনও জমির বৈধ নামজারি বা পানির সরবরাহ হয়নি।
সমিতির সভাপতি শামসুল হুদা স্থানীয়ভাবে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত। তার পরিবারের সদস্যরা দলীয় বিভিন্ন সংগঠনে সক্রিয় এবং তিনি বন ও পাহাড়ের অবৈধ দখল, বালু ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং প্রভাবশালী অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে তার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার জন্য অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সমিতির অর্থ সম্পাদক কারাগারে রয়েছে ছাত্র হত্যার মামলায়, সাবেক সম্পাদক নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের একজন।
সরকারি তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচলাইশ থানা সমবায় অফিসারসহ কয়েকজন কর্মকর্তা সমিতির সকল অপকর্মে প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করে আসছেন। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া এখনো চলমান। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারসহ অনেক সদস্য বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের অধিকার লুন্ঠিত হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এখন ন্যায়বিচারের আশায় আছেন, তবে এখন পর্যন্ত সেই দাবিতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় দপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক মোহাম্মদ মাহবুবুল হক হাজারী জানান, অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ৪৯ ধারায় তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং সমস্যা দ্রুততম সময়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক সংখ্যক ক্ষমতাসীন নেতাদের যুক্ত থাকার কারণে এই দুর্নীতি বন্ধ করা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।