ঢাকা | বৃহস্পতিবার | ১৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা অবহেলিত

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা এখনো পরিপূর্ণ রূপে সক্ষম হয়নি। ১৯৮৪ সালে ৫০ শয্যার সঙ্গে যাত্রা শুরু করা এই হাসপাতালটি এখনও ২৫০ শয্যার মর্যাদা পেলেও কার্যত ১০০ শয্যার মতো জনবল, যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোর সীমিততায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি দিন রোগীরা এসব সীমাবদ্ধতার কারণে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নানা ধরণের সমস্যায় পড়ছেন। জেলায় প্রায় ২৭ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করছেন।

জানা গেছে, হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা সময়ের সাথে বাড়ানো হয়েছে, সর্বশেষ ২০২০ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল ও যন্ত্রপাতির পরিমাণ তা অনুসরণ করেনি। প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা কমে গেছে। ১০০ শয্যার হিসাব অনুযায়ী যেখানে ৪৩ জন চিকিৎসকের প্রয়োজন, সেখানে মাত্র ১৮ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদ অনেক দিন ধরে শূন্য রয়েছে। নার্স, ওয়ার্ডবয়, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবও রয়েছে। প্রশাসনিক পদেও প্রায় ৬৩টি শূন্য পদ রয়েছে।

হাসপাতালের বাইরে ও ভেতরে রোগীরা দীর্ঘ সময় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা এবং গুমট পরিস্থিতিতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। হাসপাতালে বিভাগীয় শয্যা সংকটের প্রভাবে নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার বারান্দায় ও মেঝেতে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালের পরিছন্নতা দুর্বল, ময়লা আবর্জনা এবং দুর্গন্ধজনিত সমস্যাও সামাজিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ কার্যকর না হওয়ায় হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান না হওয়ায় অবকাঠামো ও সরঞ্জামাদি থাকা সত্ত্বেও আধুনিক ভবনটি ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি। জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে উন্নত ভবন অকেজো পড়ে আছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিভিন্ন বিভাগ থেকে ১৫৬৮ জন রোগীকে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়েছে। জরুরি বিভাগও জনবল সংকটে প্রায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ রোগীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাচ্ছে, যদিও তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করছেন, হাসপাতালের আশপাশে অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে দালালরা রোগীদের প্রলোভন দেখিয়ে টেনে নিচ্ছে, যা গরিব মানুষদের অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতির কারণ হচ্ছে। কখনও দালালরা ধরা পড়লেও তারা দ্রুত ফিরে এসে দৌরাত্ম্য চালায়।

মেডিকেল টেকনোলজি ইনচার্জ জানান, হাসপাতালের এক্সরে মেশিনের মধ্যে মাত্র একটি চালু রয়েছে, বাকিগুলো নষ্ট। একইভাবে সব আলট্রাস্নোগ্রাম যন্ত্র নষ্ট। একজন স্থানীয় সচেতন নারী সংগঠক বলেন, স্বাস্থ্যসেবা স্থায়ী করতে দালাল নির্মূল, পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ এবং ওষুধের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

হাসপাতালের আরএমও আসিফ উর রহমান দৈনিক বাংলাকে জানিয়ে দিয়েছেন, জনবল ও সরঞ্জামের অভাব সত্ত্বেও তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না হলে গাইবান্ধার স্বাস্থ্যসেবা সংকট আরও প্রকট হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।