ঢাকা | শনিবার | ১৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

জলাবদ্ধতায় নোয়াখালীর আউশ-আমনের বীজতলায় ব্যাপক ক্ষতি

নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় টানা বর্ষণ ও ফেনীর মুহুরী নদী থেকে আসা পানির কারণে আউশ ধান ও আমনের বীজতলাসহ গ্রীষ্মকালীন এবং শরৎকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি দেখতে পাওয়া গেছে। ক্ষেতে দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকায় গোড়া পচাসহ নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে, যা কৃষকদের জন্য বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এতে করে বাজারে আমন ধানের বীজের দামও বেড়ে গেছে। প্রান্তিক কৃষক শ্রেণির লোকসান খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করছেন।

জেলায় ৭ জুলাই থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং চারদিনের ধারাবাহিক বৃষ্টিতে জেলার ৬টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এই অবস্থায় আউশ ধান ও আমনের বীজতলা পানি বন্দি হয়ে তলিয়ে গেছে, যা কৃষকদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুবর্ণচরের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, চারপাশে পানি জমে থাকা কারণে নতুন বীজতলা তৈরি করার জন্য উঁচু জমির ব্যবস্থা করতে পারছেন না। যেখানে একটু উঁচু জমি পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেও ভাড়া নিতে হচ্ছে, তবে অধিক পুঁজির অভাবে নতুন বীজতলা গড়তে যথেষ্ট কষ্ট করছে কৃষকরা। যদি দ্রুত পানি না নামানো যায়, তবে আউশ ও আমনের ক্ষতি অনেকটাই হতে পারে।

কোম্পানীগঞ্জের কৃষক আমির হোসেন বলেন, আকস্মিক এই দুর্যোগে কৃষকরা দিশাহীন হয়ে পড়েছেন। শাকসবজির ক্ষতির ফলে দায়-দেনার বোঝায় চাপা পড়া কৃষকরা এখন সরকারি সহায়তার প্রত্যাশায় রয়েছেন, যাতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নোয়াখালীর মোট ৫,১৯৯ হেক্টর জমির ফসল এই পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮৯১ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা, ২,৫০০ হেক্টর আউশের বীজতলা, ১,২০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি এবং ৫৭৫ হেক্টর শরৎকালীন শাকসবজি পানির নিচে ডুবে রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জেলার ৬টি উপজেলায় ৫৭টি ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা চলছে এবং প্রায় ২৪,৯৫০টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। প্রায় ৯০,৪০৩ জন মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় ৫৮টি বাড়ি জলাবদ্ধতাজনিত কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে। বর্তমানে ২৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১,০২৩ জন ঢুকেছেন আশ্রয় নিতে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে ২৯টি মেডিকেল টিম।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মীরা রানী দাস জানান, কবিরহাট, সুবর্ণচর ও সদর উপজেলায় বীজতলা ও শাকসবজির ক্ষতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কবিরহাট উপজেলায় পানি ধীরে ধীরে নেমে আসছে, যা ক্ষতির পরিমাণ কমাতে সহায়তা করবে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠে থেকে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে চলেছেন, যাতে ফসল রক্ষা করা যায়।