ঢাকা | বুধবার | ২৩শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করলেন

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে দেশের গণঅভ্যুত্থান স্মরণ এবং প্রতিবাদের নতুন কর্মসূচির সূচনা করেছেন। ১ জুলাই দুপুরে তারা আবু সাঈদের বাড়িতে যান এবং মোনাজাতের পর তার পরিবার ও বাবা-মায়ের সঙ্গে সংলাপ করেন।

দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধুমাত্র স্বৈরশাসকের পতনের আন্দোলন ছিল না, এটি নতুন দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়সঙ্গত বন্দোবস্থের জন্য ছাত্র-জনতার সংগ্রামেরও নাম। যারা ঐ আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে, তাদের স অপরিহার্য চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এনসিপি তিন দফা দাবি – বিচার ব্যবস্থা, নতুন সংবিধান এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবে।

নাহিদ ইসলাম যৌক্তিক সংস্কারের জন্য প্রয়োজনে আবারো সংগ্রহ করে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে কোন ধরণের টালবাহানা বরদাশত করা হবে না। দরকার পড়লে পুনরায় রাজপথে নেমে যথাযথ সংস্কার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, মানুষের ন্যায্য অধিকার ও সঙ্গত সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত এনসিপি এক পা পিছিয়ে আসবে না।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রত্যয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি একটি ব্যাপক কর্মসূচি শুরু করেছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা জনসাধারণের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও মতামত সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিকালে শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের স্থল পরিদর্শন করবেন তারা এবং রংপুর নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে দেখবেন।

‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শীর্ষক এই কর্মসূচি ১ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত চলবে। এতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি দক্ষিণ অঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তর অঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী এবং সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাসহ অন্যান্য নেতা অংশগ্রহণ করছেন।

এই কর্মসূচির শুরু গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর শহীদ মিনার থেকে হবে। এরপর রংপুরে বিকেল ৩টায় পার্কের মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে লালবাগ, শাপলা, জাহাজ কোম্পানির মোড় পেরিয়ে টাউন হল মাঠে একটি পথসভায় মিলিত হবে। এরপর ডিসির মোড় হয়ে ধাপ, মেডিকেল মোড় ও চেকপোস্ট পর্যন্ত পদযাত্রা চলবে।

গণঅভ্যুত্থানকালে ১৬ জুলাই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় পুলিশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য টিয়ার গ্যাস ও লাঠিযুদ্ধে জড়ায়। অনেক ছাত্র ছড়িয়ে পড়লেও শহীদ আবু সাঈদ লাঠি হাতে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবাদ চালিয়ে যান। পুলিশ আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ ফুট দূর থেকে ছররা গুলিবিদ্ধ করলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।

এই স্মরণীয় শহীদকে সম্মান জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁর সমাধি সৌধে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাঁর আদর্শকে সামনে রেখে দেশ গড়ার শপথ নেন।