ঢাকা | শনিবার | ২৬শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১লা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দেশের বিভিন্ন স্থানে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মশা নিধন কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতার কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা মে মাসের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল। জানুয়ারি মাসে ১,১৬১ জন আক্রান্ত হলেও ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ছিল। মে মাস থেকে হটাত বৃদ্ধি পরে এবং জুন মাসে তা ভয়ঙ্কর অবস্থা সৃষ্টি করেছে। রাজধানীর বাইরের জেলা বিশেষ করে বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপকভাবে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

চলতি বছরের শুরু থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে মোট ১০,২৯৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৪২৯ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন, তবে আশার কথা হলো এই সময়ে কাউকে ডেঙ্গু থেকে মারা যেতে হয়নি। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

অঞ্চলভেদে নতুন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগের সিটি করপোরেশন এলাকা বাইরে ১৪৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৭ জন, ঢাকা বিভাগের বাইরে ৬১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৪২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪৫ জন, খুলনা বিভাগের বাইরে ২১ জন এবং রাজশাহী বিভাগের বাইরে ৫৪ জন রয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৮ জন রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ৯,০৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই পুরুষ, প্রায় ৫৯.১ শতাংশ, আর নারীর সংখ্যা ৪০.৯ শতাংশ।

অতীত বছরের তুলনায় চলতি বছরে মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও এ পর্যন্ত ৪২ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন, যাদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানাচ্ছেন, এডিস মশার বিস্তার তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ না করলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি এই প্রবণতা বজায় থাকে, তবে জুলাই মাসে আক্রান্ত সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।’

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০,২৯৬ জন। তুলনায় ২০২৩ সালে গোটা বছরে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিলো এবং ১,৭০৫ জন মারা গিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের বছরের অর্ধেকেরও কম। তবে সতর্কতা প্রয়োজনীয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম জোরদার করেছে।