ঢাকা | রবিবার | ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

তিনটি মূল সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য কমিশনে মতপার্থক্য কাটছেই না

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগ, জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন এবং নারীদের জন্য ১০০টি সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন পদ্ধতি—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য কমিশনের মধ্যে একমত হতে পারছেন না রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের প্রায় অভিন্ন প্রস্তাব থাকলেও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দলের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এখনও এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কমিশন।

কমিশন ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে মোট ১৯টি সাংবিধানিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে একটি জাতীয় সনদ (রিফর্ম চার্টার) চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে, তবে দ্বিতীয় দফার সংলাপ ব্যাহত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই তিনটি মূল ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ও সংসদের উচ্চকক্ষের কাঠামো নিয়ে একাধিক সংশোধিত প্রস্তাব দেওয়া হলেও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণভাবে একমত হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তারা বিভক্ত। বিএনপি প্রথমে পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল, জামায়াত তিনটি, পরে তারা সংশোধিত প্রস্তাবে জানায় চার সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে যার সদস্যরাই উভয় পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমে একজনকে বাছাই করবেন। তবে রাষ্ট্রপতিকে দায়িত্ব দেওয়ার ধারাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের প্রস্তাবে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি চাওয়া হয়েছে, যেখানে তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধিও থাকবেন। তারা যথাযথ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছে।

দুটি দলই অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের সম্মতির ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচনের পক্ষে, তবে এনসিপিসহ কিছু দল রাষ্ট্রপতির বিকল্প মাধ্যম হিসেবে ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রক্রিয়ার বিন্যাসে আপত্তি জানিয়েছে এবং র‍্যাংকড চয়েস ভোটিং পদ্ধতির মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে। র‍্যাংকড চয়েস ভোটিং হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যেখানে ভোটার প্রার্থীদের পছন্দের ক্রমানুসারে ভোট দেন।

জাতীয় ঐক্য কমিশনের প্রস্তাবে অনুসন্ধান কমিটি গঠন ও র‍্যাংকড চয়েস পদ্ধতির সমন্বয় আনা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘আমরা কিছুটা অচলাবস্থায় আছি এবং দলের প্রতি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছি।’

সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন এবং সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধি নিয়ে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে এবং নারীদের জন্য ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০টি সংরক্ষিত আসন করার প্রস্তাবে সম্মত, তবে ভোটের পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। জামায়াত পিআর (পারস্পরিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে ভোটের পক্ষে, যেখানে বিএনপি চায় নিম্নকক্ষের সদস্যসংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচন হোক।

জাতীয় ঐক্য কমিশনের এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাকি সংস্কার বিষয়গুলোর পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসা ও জাতীয় রাজনৈতিক পরিবেশকে মসৃণ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সময় কম থাকায় দলগুলোর ঐক্যের জন্য স্বচ্ছ ও বিলম্বহীন সমাধান প্রয়োজন।