ঢাকা | রবিবার | ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

তিনটি মূল সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ অব্যাহত

নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগ, দেশের সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন এবং নারীদের জন্য ১০০টি সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন পদ্ধতি— এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য কমিশনে এখনও সুস্পষ্ট মতানৈক্য বিরাজ করছে।

বিএনপি ও জামায়াত যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রায় অভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে, তবে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দলের ভিন্নমতের কারণে এই বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি কমিশন।

৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ১৯টি মূল সাংবিধানিক সংস্কার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ গড়ে তুলে একটি জাতীয় সনদ বা রিফর্ম চার্টার চূড়ান্ত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কমিশনের। কিন্তু দ্বিতীয় দফার সংলাপ ধীরগতিতে এগোচ্ছে, যার প্রধান কারণ তিনটি ইস্যুতে দলগুলোর মতপার্থক্য।

অচলাবস্থা কাটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এবং সংসদের উচ্চকক্ষের কাঠামো নিয়ে কমিশন একাধিক সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও প্রধান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভিন্নমত প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপি প্রথমে পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল, জামায়াত তিনটি। বর্তমানে উভয় দল সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে যার মধ্যে পার্থক্য কম। তারা ধরেছে, একটি চার সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে, যেখানে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলীয়)। এই কমিটি ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের প্রতিনিধি ছয়জনের মধ্য থেকে আলোচনায় একজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বাছাই করবে। মতৈক্য না হওয়া পর্যন্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ হবে, তবে রাষ্ট্রপতিকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বাদ দেওয়া হবে।

জামায়াতের প্রস্তাবে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি থাকবে, যার সদস্যদের মধ্যে থাকবেন জাতীয় সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি। তাদের ভোটাভুটিতেও ত্রয়োদশ সংশোধনীর পদ্ধতি প্রাধান্য পাবে, তবে রাষ্ট্রপতির অংশ বাদ থাকবে।

বিএনপি জামায়াতের প্রস্তাবের প্রতি নমনীয়তা দেখিয়েও এনসিপিসহ কিছু দল র্যাংকড চয়েস ভোটিং পদ্ধতির পক্ষে; যা ভোটারদের পছন্দক্রম অনুযায়ী একাধিক প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেয়। এনসিপি এ পদ্ধতি চালু করতে চায় যেন একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন করা যায়।

জাতীয় ঐক্য কমিশনের নিজস্ব প্রস্তাবেও পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন এবং রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের প্রতিনিধি মনোনয়নের মাধ্যমে সদস্য নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এই প্রক্রিয়াতে সম্মতি না হলে র্যাংকড চয়েস ভোটিং পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে।

সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন এবং সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধির বিষয়ে প্রায় সব দলের সমর্থন থাকলেও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। জামায়াত উচ্চকক্ষ এবং সংরক্ষিত নারী আসনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে ভোটের দাবি জানায়, আর বিএনপি চায় নিম্নকক্ষের সদস্যসংখ্যার ভিত্তিতে এই নির্বাচন হোক।

জাতীয় ঐক্য কমিশন এখনো এই বিতর্কিত বিষয়গুলোতে সমঝোতায় পৌঁছাতে চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার চুক্তি চূড়ান্ত করা যায় এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যেতে পারে।