ঢাকা | বৃহস্পতিবার | ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

তিন বছরে দেশে দারিদ্র্য হার দাঁড়ালো ২৮ শতাংশ

বাংলাদেশে গত তিন বছরে দারিদ্র্য হার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০ শতাংশের মতো, যা বর্তমানে মোট দেশজনের ২৮ শতাংশে পৌঁছিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে এই হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, আর বর্তমানে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি অর্থাৎ ১৮ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই পরিবারের সদস্যরা যেকোনো মুহূর্তে দারিদ্র্যর সীমায় পতনের আশঙ্কায় আছেন।

গতকাল সোমবার, একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার–পিপিআরসি’রের প্রকাশিত এক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। ‘ইকনোমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেবেল ইন মিড ২০২৫’ শিরোনামের এই গবেষণাকর্ম রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এলজিইডি মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে উন্মোচন করা হয়। সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এই সমীক্ষার বিস্তারিত বিষয়ে আলোকপাত করেন।

এই গবেষণা মার্চের ৮ থেকে মে’য়ের মধ্যে সময়কে কেন্দ্র করে পরিচালিত, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৮ হাজার ৬৭টি পরিবারের ৩৩ হাজার ২০৭ জনের মতামতের উপর ভিত্তি করে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের বর্তমানে তিনটি মূল সংকট চলমান রয়েছে: কোভিড-১৯ মহামারি (২০২০-২০২২), মূল্যস্ফীতি এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।

বিশেষ করে, গত বছর আগস্টের পর থেকে সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগস্ট ২০২২ এর আগে প্রায় ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ মানুষ ঘুষ দিয়ে নানা সেবা গ্রহণ করতেন, যা এখন কমে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে, সরকারি অফিসসহ পুলিশের কর্তৃপক্ষের কাছে এখনও খুবই বেশি ঘুষ দেওয়া হয়। এছাড়া, রাজনৈতিক নেতাদের কাছেও ঘুষের পরিমাণ বেড়ে গেছে। সচরাচর পরিবারের আয়ের ৫৫ শতাংশ যায় খাদ্যপণ্য কেনাকাটায়।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা বেশি ব্যয় করেন, their income often being stretched through ধার-দেনা করে চলতে। অন্যদিকে, উচ্চবৃত্ত শ্রেণির পরিবারের আয়ের তুলনায় ব্যয় কম। পাশাপাশি, বৈষম্য, হয়রানি বেড়েছে, যা মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গত সরকারের সময়ে যে ঘুষের হার ছিল ২১.৫১ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে ৩০.৭৯ শতাংশে পৌঁছেছে।

অনুষ্ঠানে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, একটি জবাবদিহিপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এভাবে সরকারি নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে যাতে মানুষ হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার না হন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি মানুষ হয়রানির কারণে কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হয়, যা দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিকে ব্যাহত করে। ফলে, অর্থনীতির পরিকল্পনায় জনমুখী দৃষ্টি ও ন্যায়বিচার, সমতা ও বৈষম্যহীনতা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারও বড়ো পরিসরের অর্থনীতির পরিবর্তে সমাজের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।