ঢাকা | বুধবার | ৩০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

দেশে ২০২৪ সালে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশি বিনিয়োগ, ১৩% হ্রাস

২০২৪ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর দেশে এফডিআই প্রবাহ ছিল ১২৭ কোটি ডলার, যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমমান। তবে ২০২৩ সালে এই নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে এই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে বিদেশি বিনিয়োগের এই হ্রাস দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের বিষয়।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের শেষে বিদেশি বিনিয়োগের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের মোট জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে, দক্ষিণ এশিয়ার গড় হার ১৩ শতাংশ, ভারতের হার ১৪ শতাংশ এবং ভুটানের মতো দেশ ১৭ শতাংশ।

এছাড়াও এ বছর নতুন প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগের ঘোষণাও কমে হয়েছে ৩৫ শতাংশ, যা ১৭৫ কোটি ডলারে সীমাবদ্ধ। বিপরীত দিকে, বাইরে থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে; ২০২৪ সালে মাত্র ৭০ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছে, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।

গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বিদেশে বিনিয়োগ হয়েছে ২০২১ সালে, যখন ৮ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।

বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতিও বেশ জটিল। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক এফডিআই ১১ শতাংশ কমে প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা। অবকাঠামো ও শিল্পখাতে বিনিয়োগের মন্দা, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি মনোযোগের অভাব, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজন বিশ্ব বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও জটিল করেছে।

তবে ডিজিটাল অর্থনীতি একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে, যদিও এর প্রবৃদ্ধি এখনো অকপটে হয়নি। ডিজিটাল সংযুক্তি বাড়াতে ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতির শক্তিশালী চালিকা শক্তি হতে পারে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে ডিজিটাল কমপ্যাক্ট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং জ্বালানি সংকট বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যদিও কিছুটা স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা চলছে, তবুও তা পর্যাপ্ত নয়।

আঙ্কটাডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের পর ২০২১ সালে এফডিআই প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে ১২.৯৪ শতাংশ, ২০২২ সালে ২০.১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪৮ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তবে ২০২৩ সালে তা আবার ১৩.৬৭ শতাংশ কমে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলারে নামে। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তানসহ কিছু দেশ এসব সময়ে এফডিআই প্রবাহ বাড়িয়েছে।

স্বল্পোন্নত ৪৫টি দেশে এফডিআই ১৭ শতাংশ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যার অর্ধেক প্রবাহ কেন্দ্রীয় দেশগুলোতে গেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অন্যান্য আর্থিক উৎসের চেয়ে এফডিআই প্রবাহ এখনও অনেক কম। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ ১০ শতাংশের বেশি কমে প্রায় ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার স্থবির অবস্থায় রয়েছে।

সুতরাং, বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এফডিআই বৃদ্ধি পেলে দেশের অর্থনীতি দ্রুত উন্নতির পথে অগ্রসর হবে।