২০২৪ সালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমে এসেছে। গত বছর এফডিআই ১২৭ কোটি ডলার ছিল, যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। তুলনায়, ২০২৩ সালে এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের সর্বশেষ বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরের শেষে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের মজুদ দাঁড়ায় ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। এই হার দক্ষিণ এশিয়ার গড় হার ১৩ শতাংশের অনেক নিচ্ছে। ভারতের এ হার ১৪ শতাংশ এবং ভুটানের ১৭ শতাংশ।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রকল্পে ঘোষিত অর্থের পরিমাণও ২০২৪ সালে ১৭৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশের মতো কম। এ বছর থেকে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে মাত্র ৭০ লাখ ডলার, বা প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছিল ২০২১ সালে, যা ছিল ৮ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাপী এফডিআই প্রবাহ ২০২৪ সালে ১১ শতাংশ কমে ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অবকাঠামোগত বিনিয়োগে মন্দা, শিল্প খাতে চাপ, এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি বিনিয়োগের কম মনোযোগ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজন বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলেছে।
তবে ডিজিটাল অর্থনীতি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হলেও তার প্রবৃদ্ধি এখনও ধীর। ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ডিজিটাল পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ জরুরি। প্রতিবেদনটি সরকারগুলোকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য বাস্তব নির্দেশনা দিয়েছে।
বাংলাদেশে গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং তার পূর্বে বিদ্যমান জ্বালানি সংকট বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যদিও কিছুটা পরিস্থিতি উন্নতি করলেও, এখনও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে তা পর্যাপ্ত নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছে, যেখানে কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ, উগান্ডা এবং সেনেগালে মোট প্রবাহের প্রায় অর্ধেক কেন্দ্রীভূত হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন সহায়তা এবং রেমিট্যান্স এই দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায়, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়লেও, একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে আরও সহনশীল ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব হবে।