ঢাকা | সোমবার | ২১শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

নওগাঁর ৭০ শতাংশ সড়কবাতি নষ্ট, বেড়েছে চুরি-ছিনতাই

সরকার বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের বিকল্প হিসেবে নওগাঁ জেলার বিভিন্ন সড়কে সোলার প্যানেল চালিত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করেছিল, যা সড়ক পরিবেশকে আলোকিত করে পথচারীদের চলাচল সহজ ও নিরাপদ করে তুলত। তবে পাঁচ বছর পর এসে জেলার প্রায় ৭০ শতাংশ সড়কবাতি অকেজো হয়ে পড়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ নানা ধরনের দুর্ভোগে পড়ছে। দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে নওগাঁ জেলায় মোট ৭,৭৪১টি সোলার ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছিল, যার জন্য ব্যয় করা হয়েছিল প্রায় ৪৩ কোটি ৭২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে এই ল্যাম্পপোস্টের প্রায় ৭০ শতাংশ অকেজো হয়ে পড়েছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার তালতলি থেকে দুবলহাটি হয়ে কাটখৈইর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কটি জেলা শহরের সঙ্গে মান্দা ও রানীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সংযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই সড়কে টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২০০টি সোলার ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছিল। এসব ল্যাম্পপোস্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সন্ধ্যার পর জ্বলত এবং যাত্রাপথকে আলোকিত করত, ফলে পথচারী, রিকশা, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন নিরাপদে চলাচল করতে পারত। কিন্তু এখন এই সড়কবাতিগুলো অকেজো হওয়ায় সন্ধ্যার পর পথচারীরা অন্ধকার ও নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে চলাচল কমিয়ে দিয়েছেন।

এছাড়াও জেলার অন্যান্য সড়ক, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সোলার প্যানেল চালিত ল্যাম্পপোস্টের অনেক অংশ নষ্ট হয়ে পড়েছে। অনেকখানে ল্যাম্পপোস্টের খুঁটি থাকলেও প্যানেল বা বাল্ব নেই, আবার কোথাও প্যানেল থাকলেও বাল্ব অনুপস্থিত। কোথাও ব্যাটারি কাজ করছে না বলে আলো জ্বলে না।

স্থানীয়রা জানান, অন্ধকার ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে চুরি, ছিনতাই ও সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা দ্রুত এসব সড়কবাতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। মান্দা উপজেলার স্কুল শিক্ষক রিমন মোরশেদ বলেন, ‘‘কাটখৈইর হয়ে তালতলি সড়ক দিয়ে শহরে আসা-যাওয়া অনেক সহজ ছিল। শুরুর দিনগুলোতে সন্ধ্যার পর ল্যাম্পপোস্টের আলোয় রাস্তা আলোকিত থাকত, কিন্তু এখন অনেকক্ষণ অন্ধকার। তাই সন্ধ্যার পর চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে গেছে।’’

নওগাঁ সদর উপজেলার গোয়ালী গ্রামের সাবেক বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া কাটখৈইর সড়কে আগে অনেক ল্যাম্পপোস্ট ছিল, যা দীর্ঘদিন ব্যবহারযোগ্য ছিলো। বর্তমানে সেগুলো নষ্ট হয়ে অনেকটাই চুরি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে। রাস্তা অন্ধকার থাকায় অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পুনরায় মেরামত করা হলে পথচারীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে।’’

হাঁসাইগাড়ী গ্রামের অটোরিকশা চালক আহাদ আলী বলেন, ‘‘গোয়ালী থেকে হাঁসাইগাড়ী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক বেয়ে চলতে হয়, যেখানে কোনও বসতবাড়ি নেই। সন্ধ্যার পর চুরি-ছিনতাইয়ের ভয়ে কেউ ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে চায় না। শুধু জরুরি প্রয়োজনে যানবাহন নিয়ে আসেন।’’

নওগাঁ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আশেকুর রহমান জানান, ‘‘এই সড়কবাতিগুলো রাস্তা ও হাট-বাজার আলোকিত করার জন্য স্থাপন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে বরং মেরামত না হওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ওয়ারেন্টি মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে এগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে এবং বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত মেরামত কার্যক্রম শুরু করা হবে।’’

এভাবে দ্রুত সড়ক বাতির মেরামত ও পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা হলে জনজীবনে নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।