ঢাকা | শনিবার | ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

নতুন ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ সক্রিয়: দেশকে আর নিরপেক্ষ থাকছে না বিএনপি

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছেন যে, আওয়ামী লীগের দলীয় পলায়ন ও ব্যাপক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের রাজনীতি অস্থিতিশীল করতে আবারও নতুন একটি ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ সক্রিয় হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে বিদেশি ও দেশি মহলগুলো সক্রিয় হয়ে ক্ষমতাসীন দলের পাপুলতিতে ভর করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এক গুরুতর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। আব্বাস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, খাগড়াছড়ির সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে কেন্দ্র করে তারা অশুভ উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত। তিনি দুঃখের সাথে বলছেন, কিছু রাজনৈতিক দল এই বিষয়গুলোকে অজুহাত করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করছে, নিজেদের স্বার্থের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। বিকল্প সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের জন্য ভয়ংকর ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। আব্বাস উল্লেখ করেন, বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক নতুন ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ চালু হয়েছে, যা অতীতে ১/১১ পরবর্তী সময়ের মতোই। আগে সামরিকভাবে এক সেনা সমর্থিত সরকারের মাধ্যমে এটি চালু হয়েছিল, আর এখন ভিন্ন রূপে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা এই একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। তিনি অভিযোগ করেন, একটি অন্তঃস্থ গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপিকে ‘অবিশ্বাস্য’ বা ‘খারাপ’ হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে। এই অপচেষ্টার পেছনে প্রশাসনের ভেতরে থাকা আওয়ামীপন্থি কিছু কর্মকর্তাও সক্রিয় বলে তিনি মনে করেন, যারা বিশ্বাস করে দেশের বাইরে থাকাকালীন বিএনপিকে দুর্বল করে দিলে ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে পারবে। আব্বাস বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল রাখতে চায়, তারা এই ‘মাইনাস-টু’ ফর্মুলাকে নতুনভাবে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে। এগুলোর পেছনে রয়েছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীর হাত। তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতাকর্মী ও আমলারা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ তারা মনে করছে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিলে নিজেদের স্বার্থ হাসিল সহজ হবে। তিনি বলছেন, প্রতিশোধপ্রিয় কিছু রাজনৈতিক দলও এই পথে এগোচ্ছে, যা দেশের জন্য বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে ইসলামি দলসহ অন্যান্য দল বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরে নির্বাচনকে ভিন্ন পথে ঠেকানোর চেষ্টা করছে। আব্বাস বলেন, কিছু দল নির্বাচন না হলে হামলার জন্য প্রস্তুত, এমনকি তারা ফ্যাসিবাদী আচরণ দেখাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছি, যেন দেশের মাটি অন্যের হাতে না যায়। তিনি মনে করেন, বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনা ও সেন্ট মার্টিন, সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে ষড়যন্ত্র একই সূত্রে গাঁথা। আগামী নির্বাচন খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হবে, কারণ বিএনপির ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিছু দলের প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব দলের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণ বিএনপিকে ভালোবাসে এবং মিথ্যা প্রচারণা দলের জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করতে পারবে না। তিনি দাবি করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রশাসন থেকে আওয়ামী লীগপ্রভাবিত কিছু ব্যক্তিকে সরিয়ে দিতে হবে, অন্যথায় নির্বাচন প্রভাবিত হবে। বিএনপি নির্বাচনোদ্যেশে প্রস্তুত ও ফেব্রুয়ারিতে ভোটের জন্য প্রত্যাশিত। সম্ভাব্য জোট ও নির্বাচন উদ্বোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি নির্বাচনের তালিকা ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তিনি মনে করেন, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বানচাল করার অপশক্তি নিয়ে কাজ করছে; এতে দেশের অস্থিতিশীলতা বাড়বে। তিনি বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটের ঘোষণা বিশ্বাস করতে চান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সেটি তার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে, এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তার সঙ্গে দলের ভবিষ্যৎও নির্ভর করছে সময়ের উপর। ইসলামিক দলগুলো নিয়ে জোট গঠনের বিষয়টি তিনি বলছেন, বিএনপি এতে চিন্তিত নয়, কারণ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মূলত ধর্মপ্রাণ ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দলকেই পছন্দ করে।