ঢাকা | মঙ্গলবার | ১২ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

নবজাতকের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ: ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুল

রাজধানীর ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গিয়ে পাঁচ দিন বয়সী নবজাতকের

হাত ভাঙার অভিযোগে চিকিৎসা অবহেলায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া

হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

সেই সঙ্গে চিকিৎসায় অবহেলায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে

না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই নবজাতকের হাত ভাঙার অভিযোগের তদন্ত করে

আগামী তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নবজাতকের বাবার করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ

জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন বলে জানান সহকারী

অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো.

শফিকুল ইসলাম (সোহেল)।

গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর ডেলটা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচ দিন বয়সী নবজাতকের চিকিৎসা

অবহেলার অভিযোগে শিশুর পিতা মো. নূরের সাফাহ্ পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে

হাইকোর্টে রিট করেন।

আরও পড়ুন: ঢাকায় ‘নি হাও! চায়না-বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা উন্নয়ন প্রদর্শনী’

সেমিনার অনুষ্ঠিত

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল সাত দিনের নবজাতকের শারীরিক অসুস্থতার

কারণে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এ কে খাইরুল আনাম চৌধুরীর অধীনে ভর্তি করেন

মিরপুরের বাসিন্দা নবজাতকের বাবা মো. নূরের সাফাহ্। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন

সময়ে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ নবজাতকের বাবার। বিষয়টি

নিয়ে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শিশুর বাবা নূরের সাফাহ্ বলেন, গত ৩ এপ্রিল সাত দিনের নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা

বেশি থাকায় ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি ফটোথেরাপি দেওয়ার জন্য। ভর্তির

পরপরই তারা জানায় যে, দীর্ঘ সময় নিরবচ্ছিন্নভাবে থেরাপি দেওয়ার জন্য তারা দুই থেকে

তিনবার ব্রেস্ট ফিডিং করতে দেবে এবং বাকি সময় ব্রেস্ট পাম্প করে তাদের কাছে দিলে

তারাই নিজ দায়িত্বে বাচ্চাকে খাইয়ে নেবে। ট্রিটমেন্ট চলাকালীন সময়ে কেউ বাচ্চার

কাছে যেতে পারবে না এবং দেখতে পারবে না। রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মা ও

বাচ্চার কাছে যেতে পারবে না।

তাদের নিয়ম অনুযায়ী, আমার স্ত্রী বাচ্চাকে রাত ১২টায় স্বাভাবিকভাবে খাইয়ে দিয়ে আসে।

সকাল ৭টায় তারা পুনরায় তাকে খাওয়ানোর জন্য ডেকে নিয়ে গেলে আমার স্ত্রী অনেক চেষ্টা

করেও খাওয়াতে পারেনি, কারণ বাচ্চা ঘুমাচ্ছিল এবং কোনোভাবেই ঘুম থেকে উঠছিল না।

কর্তব্যরত নার্স জানায় যে, ঘুম থেকে উঠলে খাওয়ানোর জন্য ডেকে দেবে। তখন সে আবারও

ব্রেস্ট পাম্প করে তাদের নিকট খাওয়ানোর জন্য দিয়ে আসে।

তিনি বলেন, পরের দিন সকাল ১০টায় ডিউটি চিকিৎসক জানায় যে বাচ্চার বিলিরুবিনের মাত্রা

নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তাকে রিলিজ দিয়ে দেবে—আমরা যেন বিল ক্লিয়ার করে আসি। ১১টার দিকে

তারা বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে দিয়ে যায় এবং জানায় যে বাচ্চার ডান হাতে ক্যানোলা

পরানোর কারণে ব্যথা আছে, তাই এই হাত যেন কম নাড়ানো হয়। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো যে

তখনো বাচ্চা ঘুমাচ্ছিল এবং পুরো শরীর কাঁথা দিয়ে মোড়ানো ছিল। বাসায় নিয়ে আসার পর

কাঁথা থেকে বের করে খাওয়ানোর চেষ্টা করার সময় দেখা যায় যে বাচ্চার ডান হাত কনুইয়ের

উপরে ভাঙা, যেটা স্পর্শ করলেই সে মারাত্মকভাবে কান্না করছে।

হাত ভাঙা থাকার বিষয়টি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই দুপুর ১২টার সময় আমরা পুনরায় তাকে

ডেলটা মেডিকেল কলেজের নিয়োনেটাল ওয়ার্ডে নিয়ে যাই, যেখানে সে ভর্তি ছিল। তাদেরকে

দেখানোর পর ডিউটি চিকিৎসক জানায় যে, সে নিজে চেক করে দিয়েছিলো ডিসচার্জ করার আগে

এবং তাদের দাবি আমরা বাসায় নেওয়ার পর টানাটানি করে হাত ভেঙে ফেলেছি।

মনে হচ্ছিল, মোবাইল কেনার মতো কেন চেক করে বাচ্চা নেইনি, সেটা আমাদের অপরাধ—যোগ

করেন নবজাতকের বাবা মো. নূরের সাফাহ্।

আরও পড়ুন: শাহরাস্তিতে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতাল

ভাঙচুর-তালাবদ্ধ

তিনি বলেন, এ পর্যায়ে তারা একটি এক্স-রে করার পরামর্শ দিয়ে আমাদের শ্যামলীর পঙ্গু

হাসপাতালে যেতে বলে, কারণ তাদের ওখানে এক্স-রে করার সুযোগ নাকি নেই। এ পর্যায়ে আমরা

লিখিত অভিযোগ দিয়ে চলে আসি, কারণ বাচ্চার ট্রিটমেন্ট আমাদের কাছে জরুরি ছিল।

সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ট্রিটমেন্ট চলাকালীন বাচ্চা ঘুমিয়েই ছিল এবং কোনোভাবেই তাকে

খাওয়ানো যায়নি। সন্ধ্যার পরপরই বাচ্চা স্বাভাবিক হওয়া শুরু করে এবং খাওয়া শুরু করে।

যেহেতু রাত ১২টায়ও বাচ্চা স্বাভাবিক ছিল এবং খাওয়াতে পেরেছে, কিন্তু সকাল ৭টায়

পুনরায় দেখার পর থেকে সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে—তাতে আমাদের ধারণা, রাতের কোনো এক সময়ে

হাত ভেঙেছে এবং সেটা স্বাভাবিক দেখানোর জন্য তাকে কোনো ধরনের সিডেটিভ ব্যবহার করে

ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল যেন আমরা না বুঝতে পারি।