ঢাকা | বুধবার | ২৩শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

নাসার রোভার ইঙ্গিত দিল মঙ্গলে প্রাণহীনের রহস্য

পৃথিবীর মতো অনুরূপ অনেক বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব কেন নেই—এই প্রশ্নের একটা সম্ভাব্য উত্তর খুঁজে পেয়েছে নাসার একটি রোভার। প্যারিস থেকে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলে এক সময়ে অল্প সময়ের জন্য নদী ও হ্রদের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু পুরো গ্রহটি দীর্ঘ সময় ধরে মূলত মরুভূমিতে পরিণত হয়েছিল, যার ফলে প্রাণ বিকাশের পরিবেশ স্থায়ী হয়নি।

মঙ্গল গ্রহে যদিও প্রাণ সৃষ্টির প্রয়োজনীয় উপাদানের অনেকটাই পাওয়া যায়, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তরল পানির দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি ছিল না। তবে প্রাচীন নিদর্শন থেকে জানা যায়, একসময় এখানে পানি প্রবাহিত হয়েছিল।

চলতি বছরের শুরুতে নাসার কিউরিওসিটি রোভার এমন কিছু শিলা আবিষ্কার করে, যেখানে কার্বনেট খনিজের অস্তিত্ব রয়েছে। পৃথিবীতে এই ধরনের খনিজ যেমন লাইমস্টোন, বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে শিলায় আটকে রাখে। বুধবার ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, এই কার্বনেট শিলা মঙ্গলের আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহবিজ্ঞানী এডউইন কাইট বলেন, ‘মঙ্গলে সংক্ষিপ্ত সময় ও নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসযোগ্য পরিবেশ ছিল, তবে সেগুলো ছিল ব্যতিক্রম, নিয়ম নয়।’ মঙ্গলে আগ্নেয়গিরির গ্যাস নিঃসরণ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায়, পৃথিবীর মতো দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয়নি, যা প্রাণের বিকাশে বাধা হয়েছে।

তাঁর কথায়, মডেল অনুসারে, মঙ্গলে তরল পানির সংক্ষিপ্ত উপস্থিতির পর প্রায় ১০ কোটি বছরব্যাপী গ্রহটি মরুভূমিতে পরিণত হয়। কিন্তু মঙ্গলের গভীরে এখনও তরল পানির অস্তিত্ব থাকা সম্ভব, যা এখনো আবিষ্কার করা হয় নি।

২০২১ সালে নাসার পারসিভিয়ারেন্স রোভার মঙ্গলের একটি প্রাচীন ডেলটায় অবতরণ করে সেখানে কার্বনেটের চিহ্ন খুঁজে পায়। বিজ্ঞানীরা আরও বেশি কার্বনেট শনাক্ত করতে চান এবং শিলাগুলো পৃথিবীতে এনে পরীক্ষা করার পরিকল্পনাও প্রণয়ণ করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আগামী দশকের মধ্যে এ প্রতিযোগিতায় রয়েছে।

এই সব অনুসন্ধানের মূল প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর মতো প্রাণ বহনকারী গ্রহ কী বিরল? ১৯৯০ এর দশক থেকে বিজ্ঞানীরা আমাদের সৌরজগতের বাইরের প্রায় ৬ হাজার গ্রহ আবিষ্কার করেছেন। তবে কেবল পৃথিবী ও মঙ্গলেই এমন শিলা পাওয়া যায়, যা গ্রহের অতীত বোঝাতে পারে।

কাইট জানান, যদি প্রমাণিত হয় মঙ্গলের পানিপূর্ণ যুগেও প্রাণ জন্মায়নি, তাহলে বুঝা যাবে মহাবিশ্বে প্রাণ সৃষ্টির প্রক্রিয়া কতটা কঠিন। আর যদি কোনো প্রাচীন প্রাণের নিদর্শন পাওয়া যায়, তবে তা জানাবে, গ্রহ পর্যায়ে প্রাণের উত্থান অনেক সহজ।