ঢাকা | সোমবার | ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ মন্তব্যে ৩১ মুসলিম দেশের তীব্র প্রতিবাদ

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ নিয়ে দেওয়া বিতর্কিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে একযোগে কড়া নিন্দা প্রকাশ করেছেন ৩১টি আরব ও মুসলিম দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগুলো। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে বিভক্ত করে নতুন বসতি স্থাপনের বিষয়ে পরিচালিত এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই প্রতিবাদ ব্যক্ত করেন।

গত শনিবার একটি যৌথ বিবৃতিতে, আরব লীগ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) প্রধানদের উপস্থিতিতে ৩১ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই বিরূপ অবস্থান নিয়েছেন। সৌদি প্রেস এজেন্সির প্রকাশিত বিবৃতিতে নেতানিয়াহু ও তাঁর মন্ত্রিসভা সদস্যদের মন্তব্যকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞাসূচক, বিপজ্জনক এবং আরব জাতির নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক শান্তির জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বিবৃতিতে সৌদি আরব, বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বাহরাইন, চাদ, কোমোরোস, জিবুতি, মিশর, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেনসহ অনেক দেশ সই করেছেন। এছাড়া আরব লীগ, ওআইসি ও জিসিসির মহাসচিবরাও এই নিন্দা জ্ঞাপনে অংশ নিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জাতিসংঘের সুরক্ষা বিষয়ক ২ নম্বর অনুচ্ছেদ ও ৪ নম্বর প্যারাগ্রাফের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, যেখানে বলপ্রয়োগ বা তার হুমকি নিষিদ্ধ, সেখানে শান্তি রক্ষার জন্য সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে যা রাষ্ট্র এবং জনগণের নিরাপত্তা ও উন্নতির স্বার্থে কার্যকর হবে।

তারা ইসরায়েলের কট্টরপন্থী মন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচের পশ্চিম তীরের ‘ই ওয়ান’ এলাকায় বসতি স্থাপনের পরিকল্পনাকে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতামূলক এবং বর্ণবাদী আচরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ ছাড়াও, তারা ইসরায়েলের ‘আগ্রাসন, গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলের’ নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করে গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান এবং পরিকল্পিত অনাহারের মাধ্যমে গণহত্যা বন্ধ করতে মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশ দাবি করেন।

এদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলোও এই ধরনের বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে জার্মানি সতর্ক করে বলেছে যে ‘ই ওয়ান’ ও মা’আলে আদুমিম অঞ্চলের সম্প্রসারণ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলা এবং পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেবে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ইসরায়েলের এমন আচরণ শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অধিকারকে অবজ্ঞা করা যা সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তির সম্ভাবনাকে ধ্বংস করবে।

স্মরণীয়, ২০২৩ সাল থেকে গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত যুদ্ধে বহু নিষ্পাপ মানুষ নিহত হয়েছেন এবং অঞ্চলটি বিভীষিকাময় খাদ্য সংকট ও ধ্বংসাবশেষের সম্মুখীন হয়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত বছর নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। বর্তমানে গাজায় সংঘটিত ঘটনাগুলো ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।