ঢাকা | বুধবার | ২৩শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

পাটগ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা: থানায় হামলা-ভাঙচুর, সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ২৫

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পাথরবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে শ্রমিক দলের

দুইজনকে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ঘটনায় বুধবার (২ ‍জুলাই) রাত সোয়া ১১টার

দিকে জেলার পাটগ্রাম থানায় ঢুকে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার

অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে।

ঘটনার পর বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি

আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কতিপয় ‘দুস্কৃতিকারী’ এ ঘটনা

ঘটিয়েছে। তবে স্থানীয় বিএনপি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এদিকে বুধবার গভীর রাতে বিএনপিকে দায়ী করে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য

সংগঠক সারজিস আলম তার ভেরিফাইড ফেসবুকে একটি পোস্ট দিলে—তা নিয়ে পাটগ্রাম ও

হাতীবান্ধা বিএনপির মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়।

এ ঘটনায় পাটগ্রামের পাথর মহালের ইজারাদার মাহমুদ হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ

সম্মেলন করেন। এতে তিনি দাবি করেন ইউএনও উত্তম কুমার দাস থানার ভারপ্রাপ্ত

কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান আমাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা না

দেওয়ায় বুধবার রাতে (২ জুলাই) চেকিং পয়েন্ট থেকে দুইজন কোয়ারি কর্মীকে ধরে নিয়ে

যায়। ঘটনা জানতে এদিন রাতে থানায় গেলে থানার ওসি ইজারাদার বাদশা জাহাঙ্গীর চপল ও

আমাকে শারিরীকভাবে আহত করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ী মহলের লোকজন এবং

শুভাকাঙ্ক্ষীরা থানার সামনে জড়ো হয়। এ সময় ওসির নির্দেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি ও

টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে ১৭ জন আহত হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম

কুমার দাশ জানান, ‘পাথর কোয়ারির ইজারাশর্ত ভঙ্গ করে ইজারাদারদের পক্ষে মহাসড়কে

চলাচলকারী পাথরবাহী ট্রাক থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে—এমন অভিযোগে উপজেলার সরেয়ার

বাজার এলাকা থেকে রাতে সোহেল রানা ও বেলাল হোসেন নামের দুজনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ

আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।’

পুলিশ জানায়, ‘ওই দুজনকে থানায় নিয়ে আসার পরপরই কয়েকশ মানুষ থানায় হামলা চালায়।

হামলায় থানার বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ

কম্পিউটার, জানালার কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ভ্যান ভাঙচুর করে সেখানে

থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি

নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে। পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত

হয়েছে।’

এ ঘটনার পরপরই পাশের হাতীবান্ধা থানা ও বড়খাতা হাইওয়ে থানা থেকে পাটগ্রামে পুলিশ

পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীদের বাঁধায় তা সম্ভব হয়নি।

পরে পাটগ্রামে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, লালমনিরহাটের জেলা

প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার, পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা

ঘটনাস্থলে যান ও পাটগ্রাম থানা পরিদর্শন করেন।

পড়ুন: ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার ইস্যুতে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, থানা ঘেরাও,

মহাসড়ক অবরোধ

এ সময় ডিআইজি আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পাটগ্রামের সরেয়ার বাজার এলাকায় চাঁদা

আদায়ের সময় ইউএনও এবং ওসি ঘটনাস্থল থেকে দুই জনকে ধরে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা

দিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় বিএনপির নামধারী কতিপয় দুস্কৃতিকারী লোকজন

আসামিদেরকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা থানার

থানায় হামলা করে ল্যাপটপ, অপ্রয়োজনে কাগজপত্র তছনছ করাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

তছনছ, পুলিশের পিকআপ ও অন্যান্য সরঞ্জাম ভাঙচুর করে। বর্তমানে পরিস্থিতির

নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়াও বিজিবির টহল

রয়েছে। আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন।