বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের বাইনচটকি এলাকায় বিষখালী নদীর তীর অবৈধভাবে কেটে অনিয়ম করে মাটি নিচ্ছেন কিছু স্থানীয় ইটভাটার মালিক। এর ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে যে, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মিত বাঁধের ভাঙনের আশঙ্কাও বেড়েছে। এ অবস্থা দেখে এলাকাবাসী গভীর উদ্বেগে আছেন।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বরগুনায় বর্তমানে মোট ৬৮টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বৈধ অনুমোদন নেই। অধিকাংশই নদীতীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে, যেখানে মালিকেরা নদীর চর থেকে মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহৃত করছে।
অভিযানের অভিযোগ রয়েছে, গত এক মাস ধরে কাকচিড়া ও বাইনচটকি এলাকায় আরএসবি এবং আল মামুন এন্টারপ্রাইজের চারটি ইটভাটায় ভেকু মেশিন ব্যবহার করে নদীর তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে নদী থেকে বড় আকারের মাটি কাটা হচ্ছে।
সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, আরএসবি ইটভাটার একটি বালুচর বা বার্জে বাঁধ থেকে খুব কাছাকাছি, মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ ফুট দূরে, নদীর তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছে। যখন গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত হন, তখন মাটি কাটার কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। এর মাঝেই স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু মালিকের বিরুদ্ধে অবৈধ কাজের জন্য মামলা বা নিষেধাজ্ঞার চেষ্টা চলছে।
নদীর তীরে গভীর গর্ত করে মাটি তুলে সেখানে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই কার্যক্রম প্রকল্পের নামে মাছ চাষের নাম করে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে চালানো হচ্ছে। এতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নজরুল ইসলাম নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, নদীর তীর থেকে কিসলু মিয়া মাটি কাটছেন, যার কারণে যদি ভাঙন ঘটে, তখন আমাদের গরীব মানুষগুলো মাথা গুজে থাকার ঠাঁই হারানোর আশংকা রয়েছে।
আরেক বাসিন্দা সুজন হাওলাদার বলেন, আমাদের এলাকা ভাঙনপ্রবণ। যদি নদীর পাড় কেটে দেওয়া হয়, তাহলে দ্রুত বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে এ অঞ্চলে পানি প্রবাহিত হবে। জীবিকার জন্য এখানের মানুষগুলো চরম সংকটে পড়বে।
এছাড়াও, কবরস্থান দখল করে ইটভাটা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে কিসলু মিয়ার বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবি, নদীর তীরের বেশ কিছু কবরের ওপর ইটের স্তুপ ফেলে রাখা হয়েছে, যা সরেজমিনে দেখা গেছে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে আল মামুন এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. লিটন বলেন, যে জমিতে মাটি নিচ্ছি তা আমাদের ক্রয়কৃত। এটি সরকারের জমি নয়।
বরগুনা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আরএসবি ইটভাটার মালিক আবদুর রাজ্জাক কিসলু বলেন, ‘যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে, তা রেকর্ডে আছে। দলিল ও খতিয়ান দেখে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’
তবে পরিবেশবিষয়ক পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান বলছেন, নদীর তীর কেটে মাটি নেওয়ার কারণে ভাঙন বাড়ছে এবং নদীর গতি পরিবর্তন হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ, মাছ ও প্রতিবেশের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। তিনি দাবি করেন, অবিলম্বে প্রশাসনের অঙ্গীকার ও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, প্রশাসনের নীরবতা ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধ ইটভাটা কার্যক্রম বেড়ে চলেছে। দ্রুত এসব ভাটাগুলো বন্ধ করে নদী সংরক্ষণের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক নির্মল কুমার রায় বলেন, নদীর তীর কেটে মাটি তোলার কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা দরকার।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কেউ যদি নদীর চর থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটতে জড়িত থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।