পূর্ণিমার জোয়ারে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকতে প্রবল ঢেউয়ের কারণে মিনি কক্সবাজার খ্যাত লুসাই পার্ক পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এই ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পুরো এলাকায় পর্যটন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বর্তমানে শহরের এই সৈকতে তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে বেড়িবাঁধ, পুকুরপাড়, পার্ক ও দোকানপাট ভেঙে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে। ভাঙনের জেরে এক সময়ে সমগ্র সৈকতটি সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক জানিয়েছেন, পারকি সৈকতের রক্ষায় ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সৈকতের দক্ষিণপাশে ঝাউগাছ প্রায় বিলীন হয়ে গেছে, আর বেঁকে যাওয়া গাছগুলোর অবস্থা করুণ। এই এলাকার ডোবায় সাগরের পানি প্রবাহিত হচ্ছে, ভেঙে গেছে লুসাই পার্কের সীমানা বেড়িবাঁধ, ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত বেড়িবাঁধও বিলীন। ফলে সাগরের ঢেউ সরাসরি বীচাঞ্চলের দোকান ও স্থাপনায় ধাক্কা মারছে।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, কর্ণফুলীর মোহনায় পাকিস্তান আমলে নির্মিত দুইটি পাথরের বাঁধ ছিল। কিন্তু বন্দরের নব্যতা বৃদ্ধির জন্য ফ্রি ড্রেজিং করার ফলে ওই দেয়ালটি ভেঙে গিয়েছে। এর ফলেই সাগরের ঢেউ সরাসরি পারকি বীচে এসে আঘাত করছে।
পারকি সমুদ্র সৈকতে আসা পর্যটক রিফাত হোসেন বলেন, ‘‘দিন দিন পারকি সৈকতের সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। ঢেউয়ের কারণে বাঁধ, গাছ ও দোকানপাট ভেঙে ধ্বংস হয়েছে। সরকারকে এগিয়ে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
লুসাই পার্কের স্বত্বাধিকারী মো. আকবর আরও বলেন, ‘‘আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখানে ব্যবসা করছি। আমার পার্কের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এখানে পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই এই এলাকার রক্ষার্থে দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।’’
পারকি বীচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. কাশেম বলেন, ‘‘শত শত ব্যবসায়ী এই বীচ এলাকার ওপর নির্ভর করে রুজি-রুজগার চালাচ্ছেন। পানির প্রবাহ এবং ঝাউগাছ ভেঙে পড়ায় আমাদের দোকানপাটের ক্ষতি হচ্ছে। এই বীচ আমাদের সম্পদ, তাই সবাই মিলে রক্ষা করতে হবে।’’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য তাহমিনা আক্তার জানান, বিষয়টি দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হবে।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক বলেন, ‘‘পারকি বীচ থেকে টানেল পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে, তবে এটি এখনও কাগজে অনুমোদিত হয়নি। স্থায়ী সমাধানের জন্য স্থানীয় জনগণের সহায়তা ও প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পারকি সৈকতের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের মুখে পড়বে বলে সবাই আশঙ্কা করছেন।