আজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার ‘৩৬ জুলাই উদ্যাপন’ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও অন্যান্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা এই গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং চলমান রাজনৈতিক সংকট তুলে ধরা হয়েছে। এতে স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঘোষণাপত্রের মূল বিষয়বস্তু হলো:
১. পাকিস্তানের স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জন।
২. বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের প্রত্যাশা।
৩. স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের সংবিধান প্রণয়ন ও তা প্রয়োগে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা।
৪. একদলীয় শাসনব্যবস্থা এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার হরণ।
৫. ষাট-এস দশকের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার মুক্তিমূলক সংগ্রাম ও ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন।
৬. জনমত বিপর্যস্ত করে শেখ হাসিনার অতিষ্ঠ ক্ষমতা ও ফ্যাসিবাদ প্রবণতা।
৭. দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও মানুষের জীবনযাত্রায় দুর্নীতি ও অব্যাহত ক্ষয়ক্ষতি।
৮. ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণআন্দোলনে সরকারের রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন।
৯. জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মাধ্যমে অবৈধ সরকারের পতন ও নতুন অস্থায়ী সরকারের গঠন।
১০. আগামী দিনে সুশাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধারাবাহিক সংগ্রামের প্রত্যয়।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি দিশানির্দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে জনগণের অঙ্গীকার ও আশার প্রতিফলন।
এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে দেশের প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ এবং জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে, যা আগামী দিনে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।